কুলাউড়ায় প্রেম করে বিয়ে, তিন দিনের মাথায় প্রেমিকার পল্টিতে প্রেমিক কারাগারে!

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০১৯ | ১১:১৫ অপরাহ্ণ | 2300

কুলাউড়ায় প্রেম করে বিয়ে, তিন দিনের মাথায় প্রেমিকার পল্টিতে প্রেমিক কারাগারে!
ছবিতে প্রেমিক ও প্রেমিকা

কাতার প্রবাসী মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ইমন ছুটিতে দেশে এসে তারিন নামে এক ধনীর দুলারীর সাথে প্রেম প্রেম খেলায় মত্ত হয়ে পড়ে। তাদের প্রেম এক সময় চাউর হয়ে পড়লে প্রেমিকার পরিবার প্রেম মেনে না নেওয়ায় প্রেমিক যুগল ঘর ছাড়ে সুখেরও লাগিয়া। পালিয়ে বিয়ে করে তারা দুজন হাজির হয় কুলাউড়া থানায়। থানায় হাজির হওয়ায় কাল হয় প্রেমিক ইমনের জন্য। তারিনের পরিবার থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে অপহরণের মামলা দায়ের করে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেয় ইমনকে। পল্টি খেয়ে যায় প্রেমিকা তারিনও। কোর্টে তাকে অপহরণের জবানবন্দি প্রদান করলে আদালত ইমনকে জেলহাজতে ও তারিনকে তার মায়ের জিম্মায় দেয়া হয়।

জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া পৌর শহরের বিহালা গ্রামের গরীব পরিবারের সন্তান কাতার প্রবাসী ইমন আলীর সাথে উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের মৈন্তাম গ্রামের তাহির আলীর মেয়ে তাহমিনা আক্তার তারিনের সাথে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক চলছিলো। প্রেমিকার কথায় ছুটিতে মাস খানেক আগে দেশে আসে ইমন এবং বিয়ের প্রস্তাবও পাঠায় প্রেমিকার বাড়ীতে। কিন্তু আমেরিকা অ্যাপ্লাই করা মেয়েকে কাতার প্রবাসী ইমনের কাছে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় তারিনের পরিবার।

তারিনের পরিবার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ১৩ মে ইমন ও তারিন ঘর ছাড়ে। সিদ্ধান্ত নেয় তাঁরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার। ১৫ মে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০নং ওয়ার্ড কাজী অফিসে উপস্থিত হয়ে এক লক্ষ টাকা দেনমোহর দিয়ে রেজিস্ট্রমূলে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। তারিনের স্কুল সার্টিফিকেটে ও জন্ম নিবন্ধনে তার জন্ম তারিখ হলো ০১-০১-২০০১ইং। অতঃপর ১৬ মে সিলেট জজ কোর্টের আইনজীবী মোঃ মিজানুল হকের কাছে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে দুজন উপস্থিত হয়ে বিয়ের বিষয়ে একটি এফিডেভিট করেন। এরপর এসব প্রক্রিয়া শেষ করে কাবিনের রশিদ নিয়ে ইমন ও তারিন একই দিনে সন্ধ্যায় হাজির হন কুলাউড়া থানায়। প্রেমিকা তারিন নিজে স্বীকার উক্তি দেয় যে সে ইমনের সাথে স্বেচ্ছায় পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। তারিনের পরিবার ও একটি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে কুলাউড়া থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে ইমনকে আটকে দেয়া হয়। আর তারিনের মা কৌশলে তারিন কে তার হেফাজতে নিয়ে নেন। তারিনের স্কুল সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন ও কাবিননামায় তাহমিনা আক্তার তারিন নাম উল্লেখ থাকলেও মামলার এজাহারে তাহমিনা জান্নাত তারিন উল্লেখ করা হয়েছে। বয়স দেখানো হয়েছে ১৭। কিন্তুু সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন ও কাবিননামা অনুযায়ী তারিনের জন্ম তারিখ হলো ০১-০১-২০০১।

১৯ মে আদালতে প্রেমিকা তারিন তার জবানবন্দিতে জানায়, ঘটনার দিন সে কুলাউড়া ইয়াকুব তাজুল মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাড়িতে ফেরার পথে ইমন তার মুখে রুমাল চেপে ধরলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। জ্ঞান ফেরার পর দেখে সে একটি বাড়িতে রয়েছে। পরে ইমনের নিকট সে জানতে পারে, সে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে তার খালার বাড়িতে রয়েছে। ওই বাড়িতে সে তাকে জোর করে দুই তিন দিন আটকে রেখে তাকে ধর্ষণ করে। সম্পর্কে ইমন তার চাচাতো ভাই হয়। এদিকে মৌলভীবাজার আমলগ্রহণকারী আদালতের নথি থেকে জানা যায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রেমিকা তাহমিনা আক্তার তারিনকে সুষ্টু তদন্তের স্বার্থে নারী ও শিশু নির্যাতন দম আইনের ২২ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন। প্রেমিকা তারিন আদালতে হাজির হলে তার মাতা ফয়জুন নেছা বিজ্ঞ আদালতে বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে মেয়েকে নিজ জিম্মায় নেয়ার প্রার্থনা করেন। এবং বিজ্ঞ আদালত তিন হাজার টাকা বন্ড দাখিলের মাধ্যমে প্রেমিকা তারিনকে তার মায়ের কাছে জিম্মায় দিয়ে দেন। অন্যদিকে প্রেমিক ইমনের বিজ্ঞ আইনজীবী আদালতে জামিন আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন।
এদিকে প্রেমিকা তারিনের একটি ভিডিও বার্তা জানায়, আমি নিজের ইচ্ছা থাকিও বাড়ি থাকি আইছি, কেউ এর মাঝে দায়ী নায় বা কেউ আমারে অপহরণ করছেনা। এর কারণে কাউকে বিভ্রান্ত করে লাভ নাই বা নুর হোসেন নামে একটি ছেলেরে বহুত বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, সে এসব বিষয়ে কিচ্ছু জানে না। তারে অহেতুক বিভ্রান্ত করে লাভ নাই। আমি আমার নিজের ইচ্ছা থাকি কইয়ার, কেউ আমারে জোর করি কওয়ার না।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুলাউড়া থানার এসআই মোঃ আব্দুল খালেককে একজন সাবালিকা মেয়ে কিভাবে নাবালিকা হলো প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী মামলা নেয়া হয়েছে। তবে বাদী পক্ষ কোনপ্রকার সার্টিফিকেট আমাদের দেয়নি। তদন্তের স্বার্থে আমরা স্কুল থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবো। বয়স নির্ধারণের জন্য হাসপাতালে আবেদন করেছি। মেডিকেল রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রকৃত বয়স নির্ধারণ করে মামলার চার্জশিট দেয়া হবে।

কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইয়ারদৌস হাসান ইমনকে সিএনজি অটোরিকশা চালক উল্লেখ করে বলেন, সে মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে অপহরণ করে ফেঞ্চুগঞ্জে তার আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটির ভাই ইউসুফ আলী অপহরণকারী ইমনকে প্রধান আসামী ও তার পরিবারের সদস্যসহ পাঁচজনকে আসামী করে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে। মেয়েটি বিজ্ঞ আদালতে অপহরণ নিয়ে ইমনের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছে।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com