কুলাউড়ায় কেউ কেউ দিনে মহাজোট রাতে ঐক্যফ্রন্ট

বৃহস্পতিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ | 2690

কুলাউড়ায় কেউ কেউ দিনে মহাজোট রাতে ঐক্যফ্রন্ট

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে দিনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও রাতে মহাজোট। আবার কেউ কেউ দিনে মহাজোট রাতে ঐক্যফ্রন্ট। এমন আলোচনা-সমালোচনায় কুলাউড়ার নির্বাচনি মাঠ সরগরম। এ নিয়ে দুই দলের দুই নবাগত প্রার্থীর মাঝে চলছে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচাল। এই আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং মহাজোট প্রার্থী বিকল্পধারার এমএম শাহীন পরস্পর বিরোধী অবস্থান থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এই নির্বাচনি এলাকায় সুর ওঠেছে আ’লীগের বড় একটি অংশ ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর পক্ষে ও বিএনপির একটি অংশ মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে গোপনে নির্বাচনি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি, মনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা আ’লীগের এক জনপ্রতিনিধি নেতা, শ্রমিকীগের পদস্থ নেতা, উপজেলা আ’লীগের সম্পাদকীয় ও সদস্য পদমর্যাদার একাধিক নেতা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী, কেন্দ্রীয় আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের পক্ষে রাতে নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করছেন। এই সব নেতা ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে আ’লীগ রাজনীতিতেও বিকশিত হয়েছেন সুলতান মো. মনসুরের উৎসাহ অনুপ্রেরণায়। ফলে এই সব নেতৃবৃন্দ দিনের বেলা মহাজোট প্রার্থী এমএম শাহীনের পক্ষে সরব থাকেন নির্বাচনি প্রচার কাজে। অন্ধকারে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর পক্ষে। একই ভাবে উপজেলা পর্যায়ের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বেশ কিছু নেতা মহাজোট প্রার্থী এমএম শাহীনের পক্ষে রাতের বেলা নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে দিনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি তৎপরতায় ব্যস্ত সময় কাটান। দুই দলে নেতৃবৃন্দের দু-মুখি অবস্থানের কারনে সাধারণ ভোটাররা বিপাকে পড়েছেন। তারা দিনের কথা নাকি রাতের প্রচারে বিশ্বাস করবেন? কুলাউড়া উপজেলা সদর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর মাঝে এই প্রভাবে চলছে লুকোচুরি খেলা। ফলে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট দুই শিবিরের নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দোলাচালে ভরসা হারাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম জানান প্রধানমন্ত্রী আ’লীগ সভাপতির সিদ্ধান্তের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মী একজোট হয়ে নৌকা প্রতিকের পক্ষে কাজ করায় মহাজোট প্রার্থীর অবস্থা দিন দিন উন্নতি হচ্ছে। সব মিলিয়ে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।

নির্ভরশীল একটি সূত্র জানায়, কুলাউড়া উপজেলা আ’লীগের সম্পাদকীয় পোস্টে থাকা এক জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি কার্যক্রমে তেমন সরব না থেকে রাতে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীকে ভোট দিতে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। সূত্র আরো জানায় মহাজোট প্রার্থী এমএম শাহীন বিজয়ী হলে তিনি আ’লীগে যোগদান করবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তখন জনপ্রতিনিধি ওই আ’লীগ নেতার আগামী দিনের পথের কাটা সরাতে মহাজোট প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। একই ভাবে কুলাউড়া উপজেলা আ’লীগের সদস্য পদমর্যাদার এক নেতা গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে অতি নিকট জনকে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী করেন। নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন। উপজেলা আ’লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ যারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দানে যারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তাদের বিপক্ষে অবস্থান হিসেবে গোপনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর পক্ষ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। গত পৌরসভা নির্বাচনে কুলাউড়ায় আ’লীগ প্রার্থী নৌকা প্রতিকের সফি আহমদ সলমানের পক্ষে স্থানীয় আ’লীগের নেতৃস্থানীয় একটি অংশ নিস্ক্রিয় থাকায় সে নির্বাচনে তিনি তৃতীয় হন। এবারের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে বিকল্পধারার প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করায় মনোনয়ন প্রত্যাশী আ’লীগ নেতৃবৃন্দ ও তাদের অনুসারীদের অনেকে এক সময়ে কুলাউড়ায় আ’লীগের সুলতান মো. মনসুরের অনুকুলে গোপনে কাজ করছেন বলে জানান কুলাউড়া সদর ইউনয়িনের করের গ্রামের সাধারণ ভোটার ইন্তাজ আলী।

কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আলহাজ্ব লুৎফুর রহমান চৌধুরী ২৪টুডেনিউজকে বলেন, বিশ্বনন্দিত প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী ও আ.লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত মহাজোট প্রার্থী এমএম শাহীনের পক্ষে নির্বাচনি প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। নৌকা র্মাকার প্রার্থী এম এম শাহীনকে বিজয়ী করতে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। কুলাউড়া সদর ইউনিয়নে নৌকা র্মাকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে উপহার দেবেন বলে জানান।

জীবন ভর বিএনপির রাজনীতি করা ও তার হাতে গড়া কুলাউড়া বিএনপির অনেকে মহাজোট প্রার্থী এমএম শাহীনকে রাজনৈতিক আদর্শ মনে করে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ঐক্যফ্রন্টের কারনে এমএম শাহীন বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিলে তিনি বিকল্পধারায় যোগ দিয়ে মহাজোটের মনোনয়ন নিশ্চিত করে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করছেন। ফলে সারা জীবনের রাজনৈতিক শ্রম সাধনায় গড়া বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের একটি অংশ গোপনে তার পক্ষে নির্বাচনি কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে দুই শিবিরেই অশান্তির দাবানল জ¦লছে। এই আসনে গোপন প্রচার কাজে যিনি এগিয়ে থাকবেন তিনি বিজয়ী হবেন বলে অনেকে মন্তব্য করেন। কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী জানান, কে আ’লীগ কিংবা বিএনপির নেতা ছিলেন তা বিবেচ্য নয় দলীয় প্রতিক ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী সুলতান মো. মনসুর বিএনপি প্রার্থী। তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ নেতাকর্মী।

মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান মোবাইলে বলেন কেউ কেউ গোপনে দলীয় বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তদৗল্প সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com