পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার ত্রুটিপূর্ণতার কারনে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর ভোগান্তি

শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ৮:৫১ অপরাহ্ণ | 48

পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার ত্রুটিপূর্ণতার কারনে জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে সিলেট নগরীর উন্নয়নের জন্য।কিন্তু কি কাজ হচ্ছে,তার কোনও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।দিন দিন ভোগান্তি বেড়েই চলেছে নগরবাসীর।অপরিকল্পিত ড্রেনের উন্নয়নকাজ ও জনগণের অসচেতনতার কারনেই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার ত্রুটিপূর্ণতা।ড্রেনেজ উন্নয়নে পরিকল্পনার ঘাটতি।নিয়মিত ড্রেন গুলো পরিষ্কার না হওয়া।এই সমস্ত কারনে বৃষ্টির পানি সময়মত নামতে না পেরে জলাবদ্ধতার দেখা দিচ্ছে।অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।এতে করে ভোগান্তি বাড়ছে নগরবাসীর।

রাস্তার পাশে ড্রেনে ধীরগতির উন্নয়ন কাজ চলমান।এজন্য বৃষ্টির পানি বের হতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।পাশাপাশি যেখানে-সেখানে ফেলা ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারনে বৃষ্টির পানির সঙ্গে সেই সব ময়লা-আবর্জনা ড্রেনে পড়ে দ্রুত ভরাট হয়ে ড্রেনের পানি ধারণ ক্ষমতার বাহিরে চলে যাওয়ার ফলে অতিরিক্ত পানি বয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।কিছু কিছু জায়গায় আবার ড্রেনের মুখে ময়লা আটকে পানি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় জলবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে চারপাশটা অপরিষ্কার অরিচ্ছন্ন করার কারনে এমনকি ড্রেনের ঢাকনা তুলে তার মধ্যে হোটেলের উচ্ছিষ্ট,বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারনে ড্রেন গুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে।

তবে পুণ্যভূমি সিলেট নগরীকে ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে স্থাপন করা হয়েছিল ডাস্টবিনের কিন্তু বর্তমানে এখন আর সেই গুলো আর চোখে পড়েনা।নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছিল।বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৬ সালে নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্দেশ্যে এই ডাস্টবিন গুলো স্থাপন করা হয়।ডাস্টবিন গুলো স্থাপনের মাত্র সাড়ে ৫ বছরের মধ্যেই প্রায় সবকটি ডাস্টবিনই উধাও হয়ে গেছে।ডাস্টবিন গুলো স্থাপনের পর লোকজন ডাস্টবিনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা শুরু করেন।কিন্তু অদৃশ্য কোন কারনে ধীরে ধীরে ডাস্টবিনের সংখ্যা কমতে শুরু করে।এক সময় প্রায় সবকটি ডাস্টবিন হাওয়া হয়ে যায়।কিছু কিছু এলাকায় স্টিলের ফ্রেম পড়ে থাকতে দেখা গেলেও ডাস্টবিনের আর দেখা মেলে না।নাম মাত্র কয়েকটি ডাস্টবিনেরই এখন দেখা পাওয়া যায়।

পুরো নগর জুড়েই ঘনবসতী বাসা-বাড়িতে পরিপূর্ণতার কারনে নগর জুড়ে বসবাসরত নগরবাসীর ময়লা-আবর্জনা ফেলার নেই কোন নির্দিষ্ট ডাস্টবিনের ব্যবস্থ যার ফলে নগরবাসী যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারনে সেই ময়লা-আবর্জনা বৃস্টির পানির সাথে ভেসে গিয়ে ড্রেনের মধ্যে পড়ে ড্রেন ভরাট ও ড্রেনের পানি যাওয়ার মুখে আটকে থাকার কারনেই অল্প বৃষ্টি হলেই ড্রেনের পানি উপচে পড়েই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারন।যেখানে সেখানে ময়লা ফেলার কারনে যেমন পরিবেশ দূশিত হচ্ছে ঠিক তেমনি ভাবে মারাত্নক ভাবে ক্ষতির সম্মুক্ষিনের মুখে পড়ছে ড্রেন গুলো।এছাড়া পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।পরিকল্পিত ভাবে নগরীর প্রতিটি এলাকায় ও পাড়া মহল্লায় ও রাস্তার মুড়ে মুড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্টি ডাস্টবিন স্থাপন করতে পারলে ও ডাস্টবিনের রক্ষনা বেক্ষন করতে পারলে অল্প বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে পারেন নগরবাসীর।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) বিধায়ক রায় চৌধুরী জানিয়েছেন,পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তেই বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ডাস্টবিন গুলো স্থাপন করেছিল সিসিক।এখন অনেক ডাস্টবিনই যথাস্থানে নেই।কেউ না কেউ হয়তো নিয়ে গেছে।এগুলো জনগণের সম্পদ।এগুলো রক্ষায় জনগণেরও নজর রাখা প্রয়োজন। জনগণের নজরদারি থাকলে আগামীতে ডাস্টবিন গুলো স্থাপনকৃত জায়গায় থাকবে। তিনি জানান,নতুন ডাস্টবিন কেনার জন্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।যত দ্রুত সম্ভব ডাস্টবিন এনে স্থাপন করা হবে।নতুন ডাস্টবিন স্থাপনের পর আর এই সমস্যা থাকবে না আশা করা যায়।

সিসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা হানিফুর রহমান বলেন,বিভিন্ন পয়েন্টে ডাস্টবিন দেয়ার পর ময়লা-আবর্জনা ডাস্টবিনেই ফেলা হতো।বর্তমানে অনেক জায়গায় ডাস্টবিন নেই। কিছু কিছু স্থানে ডাস্টবিন ভেঙে গেছে।আবার কোথাও কোথাও ডাস্টবিন চুরি হয়ে গেছে।ডাস্টবিন গুলো না থাকায় বর্তমানে অনেকে রাস্তায় আবর্জনা ফেলে দেন।এর ফলে আমাদের পরিচ্ছন্ন কর্মীদেরও কাজ বেড়েছে।আগে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে আবর্জনা তুলে নেয়া হতো।এখন বিভিন্ন স্থান থেকে তুলে নিতে হচ্ছে।যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে নতুন করে ৫০০ ডাস্টবিন কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

সিসিক সূত্র জানায়,২০১৬ সালে সিলেট নগরীকে ক্লিন সিটি গড়ার লক্ষ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ডাস্টবিন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়।এজন্যে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ও মিউনিসিপ্যাল গভর্ন্যান্স সার্ভিসেস প্রজেক্ট (এম.জি.এস.পি) এর আওতায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সিসিক।এজন্য তৈরি করা হয়েছিল হলুদ ও নীল রংয়ের শক্ত প্লাস্টিকের তৈরি দুই শতাধিক ডাস্টবিন।আপনার শহর পরিষ্কার রাখুন-আমাকে ব্যবহার করুন-লেখা সম্বলিত ডাস্টবিনে সিসিকের লোগোও দেয়া হয়।ডাস্টবিন গুলো তৈরিতে ব্যয় হয় ৯ লাখ টাকা।নিচে চাকা সম্বলিত ডাস্টবিন গুলো যাতে চুরি করা না যায়-এজন্য এগুলো তালাবদ্ধও করে দেয়া হয়েছিল।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র বন্দরবাজার,জিন্দাবাজার,পূর্ব-জিন্দাবাজার,বারুতখানা,রিকাবীবাজার,চৌহাট্টা,আম্বরখানা,নাইওরপুলসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছিল।হোটেল-রেস্তোঁরা,বিভিন্ন মার্কেট ও বিপনি বিতানের আবর্জনা যাতে রাস্তার উপর ফেলা না হয়-এজন্য রাস্তার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা মোড়ে মোড়ে ডাস্টবিন গুলো স্থাপন করা হয়।প্লাস্টিকের তৈরি ডাস্টবিন স্থাপনের কয়েক মাস আগে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে নগরীতে স্থাপন করা হয়েছিল আরও ২৫ টি ডাস্টবিন।স্টিলের তৈরি এই ২৫টি ডাস্টবিন বেশ চকচকে হওয়ায় লোকজনের নজর কাড়ে।

২০১৬ সালে ডাস্টবিন স্থাপনকালে নগরী থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হতো।এরপর প্রায় ৭ বছর পেরিয়ে গেছে।বেড়েছে বর্জ্যরে পরিমাণও। বিপুল পরিমাণের এই বর্জ্য নগরীর পাড়া-মহল্লা,হোটেল-রেস্তোঁরা,ক্লিনিক ও হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করে নগরীর কয়েকটি ডাম্পিং পয়েন্টে রাখা হয়।এর বাইরেও নগরীতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার দৃশ্যও চোখে পড়ে।এমনকি প্রধান সড়কেও মাঝে মধ্যে আবর্জনার স্তুূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে।যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার ফলে প্রায়ই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।কিছু কিছু এলাকায় নগরবাসীকে মুখে রুমাল চেপে চলাচল করতে হয়।ওই অবস্থায় নগরীর ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে সিসিক ডাস্টবিন স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com