সুনামগঞ্জে বন্যায় ৮৪৮ কি. মি. সড়কের ক্ষয়ক্ষতি

শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০১৯ | ৬:৪৮ অপরাহ্ণ | 746

সুনামগঞ্জে বন্যায় ৮৪৮ কি. মি. সড়কের ক্ষয়ক্ষতি

সাম্প্রতিক বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার সড়কে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ১১ টি উপজেলার সবকটি সড়কেই খানা-খন্দ তৈরি হয়েছে। বন্যায় এসকল রাস্তাঘাট ভাঙনের ফলে যেমন চালকদের সমস্যা হচ্ছে ঠিক তেমনি চালকদেরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

প্রায় ৮৪৮ কিলোমিটার সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ২৫ লক্ষ মানুষের ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়ন, রঙ্গারচর, সুরমা ইউনিয়নের বেশির ভাগ রাস্তা পানির নিচে তলে তলিয়ে যাওয়ায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ভুগান্তি এই এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকায় বাঁধ ভেঙে প্রায় তিনটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের সৃষ্টি হয়েছে বাধা। তাছাড়া পৌর শহরের কালিবাড়ি, জামাইপাড়া, উকিলপাড়া এলাকায় বেশ কয়েকটি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় খানাখন্দ।

তাছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়াবাজারসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার সড়ক পানি তোড়ে ভেসে গিয়েছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার শরিফপুর এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ আহমেদ বলেন, আমাদের এলাকার রাস্তার এলাকার অবস্থা খুব খারাপ। পানিতে রাস্তাঘাট ভাঙন দেখা দিচ্ছে। এতে করিয়া আমরার চলাফেরায় অনেক কষ্ট হয়। দ্রুত এই রাস্তাঘাট গুলা সংস্কার করার লাগি কতৃপক্ষ কাছে আবেদন জানাই।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাম ইউনিয়নের বাসিন্দা ফরিদ আহমেদ বলেন, সুনামগঞ্জ যাওয়া-আওয়া আমরার লাগি খুব কষ্ট হয়। রাস্তার জায়গায় জায়গায় গর্ত। আর গর্ত গুলো ছোট না বড় বড় গর্ত। সিএনজি উঠলেতো ভাঙনের ফলে যে ঝাকি খাওয়া লাগে এতে অনেক কষ্ট হয়।

সিএনজি চালক ওলি আহমেদ বলেন, বন্যার পর থকি রাস্তাঘাটে যে ভাঙন দেখা দিছে এতে করিয়া আমরার গাড়ি চালাইতে খুব কষ্ট হয়। বিশেষ করি সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার, আবার সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা গুলোতে গাড়ি চলাচলে অনেক অসুবিধা হয়। বিরাট বিরাট গর্ত তৈরি হইছে যা দুঘর্টনা হওয়ার ঝুকি রাখে।

সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা জয় তালুকদার বলেন, ট্রাফিক পয়েন্ট থকি পুরাতন বাসস্টেশন এলাকার রাস্তায় বিশাল গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বালু আর পাথর দিয়ে কিছু গর্ত ঢাকার চেষ্টা করা হলেও আবার বৃষ্টি দিলে এগুলো মিশে যাবে। আমরা চাই রাস্তাগুলো যেনো দ্রুত মেরামত করা হয়।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) তথ্যমতে, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৬৬টি স্থানে প্রায় ১৮৪ কি.মি, শাল্লা উপজেলায় ২৩টি স্থানে ৪৫ কি.মি, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ৩০ টি স্থানে ৬০ কি.মি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ৪২ টি স্থানে ১২৬ কি.মি, দিরাই উপজেলার ৯ টি স্থানে ২৮ কি.মি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫১ টি স্থানে ১৬৮ কি.মি, তাহিরপুর উপজেলায় ৩ টি স্থানে ১৬ কি.মি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৬ টি স্থানে ৬ কি.মি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ টি স্থানে ৭৫ কি.মি, ধর্মপাশা উপজেলায় ১৫ টি স্থানে ৫০ কি.মি, ছাতক উপজেলায় ১০ টি স্থানে ৫৮ কিলোমিটার রাস্তা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে জেলার মোট ২৭৫ টি স্থানের ৮১৮ কিলোমিটার রাস্তায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে প্রায় ১৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কতৃপক্ষ। তাছাড়া ১১ উপজেলায় প্রায় ৯৬ টি ব্রিজ ও কালভার্টের ক্ষতি হয়েছে যার আনুমানিক ক্ষতি ধরা হয়েছে ৪ কোটি টাকা।

অন্যদিকে জেলা সড়ক ও জনপথের তথ্যমতে, সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যায় প্রায় ৩০ কি.মি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলেশি প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃতপক্ষ। তাছাড়া সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কেও ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে জেলা এলজিইডি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকবাল আহমেদ বলেন, পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে আমাদের ৮১৮ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে সরকার থেকে আমাদের বরাদ্দ পাঠানো হয়েছে। এখনো অনেক সড়কে পানি। এই পানিগুলো কমে গেলে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করে দিবো।

জেলা সড়ক ও জনপথ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বন্যায় আমাদের সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কও রয়েছে। আনুমানিক হিসেবে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com