বড়লেখার দাসেরবাজারে শনিবার ১০ সকালে একটি সালিশ বৈঠকের উত্তেজনার জেরে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশ ও মধ্যস্থতাকারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৪০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এসময় উত্তেজিত উভয় গ্রামবাসী স্থানীয় বাজারের শতাধিক দোকান পাটে ও ১০ টি যানবাহনে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ৮০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিন, এলাকাবাসী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার দাসেরবাজার ইউপির সুড়িকান্দি গ্রামের আব্দুল করিম ও লঘাটি গ্রামের মান্না মিয়ার মধ্যকার পূর্ববিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষে শনিবার সকালে স্থানীয় বাজারের সবজি শেডে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাহার উদ্দিনের সভাপতিত্বে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি হাজী মুছব্বির আলী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন প্রমুখ। বিচারের শুনানীকালে বাদী ও বিবাদী পক্ষের কথা কাটাকাটির জেরে মারাত্মক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এসময় উভয় পক্ষ বৈঠক থেকে বেরিয়ে গ্রামের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসী নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সকাল এগারোটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে কুলাউড়া-চান্দগ্রাম মেইন রোডে উভয় পক্ষ অবস্থান করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে সুড়িকান্দি গ্রামের সুমন আহমদ, রাফি আহমদ, মেহরাজ মিয়া, ইউপি মেম্বার সাইদুর রহমান এবং লঘাটি গ্রামের ফখরুল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান, বাদই মিয়া, আব্দুল আহাদ, ছাদিকুর রহমান, তিয়াম আহমদ চৌধুরী, নুরই মিয়া, রফিক উদ্দিন আহত হন। এসময় পুলিশের এসআই সুব্রত কুমার দাস ও কনস্টেবল তোহেল মিয়া এবং মারামারি থামানোর মধ্যস্থতাকারী সোলেমান মিয়াও আহত হন। অহতদেও কয়েকজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালিন একপক্ষ অন্য পক্ষের দোকানপাটে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক ও শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ইন্সপেক্টর মোশাররফ হোসেন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান। এসময় পুলিশ ৮০ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি বর্ষণ করেছে। পরে জুড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদারের নেতৃত্বে পুলিশের আরেকটি টিম ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে বিকেলে তিনটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষ চলাকালে কুলাউড়া-চান্দগ্রাম অঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় ৩ ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
দাসেরবাজারের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সংঘর্ষের ঘটনায় গণহারে বিভিন্ন দোকানে হামলা চালিয়ে শুধু ভাংচুরই করা হয়নি, লুটপাটও করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় শতাধিক দোকান পাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দোকান ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
ইউপি চেয়ারম্যান কমর উদ্দিন জানান, সালিশ বৈঠক থেকে বেরিয়েই এক পক্ষ অন্য পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তার মালিকানাধীন মার্কেটের দোকানপাটেও ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ জানান, সংঘর্ষ ও দোকানপাট ভাংচুরের বিষয়টি সমঝোতা করার জন্য তিনি উভয় পক্ষের সাথে যোগাযোগ করছেন।
বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের ফাঁকা গুলি বষর্ণের সত্যতা স্বীকার করে জানান, সালিশকারীদের ব্যর্থতার কারণেই অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি সম্পুর্ন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
Development by: webnewsdesign.com