পুরনো নৌকা মেরামতের কাজে ব্যস্ত হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষ

সোমবার, ১৩ মে ২০১৯ | ৩:৫৩ অপরাহ্ণ | 1038

পুরনো নৌকা মেরামতের কাজে ব্যস্ত হাকালুকি হাওর পাড়ের মানুষ

দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকির বিশাল জলরাশির বুকে জেগেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। চরের জমিতে এখন কৃষি কাজে ব্যস্ত এখানকার মানুষ। প্রতিবছর ঝড়-বৃষ্টির সময় এই চরগুলো ভরে ওঠে অথৈই পানিতে। চারিদিকে পানি আর পানি। এ সময় এসব অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে নৌকা।

বর্ষার পানিতে প্লাবিত হয়ে যায় পুরো অঞ্চল। যার ফলে বর্ষায় নৌকা ছাড়া চলাফেরা করা সম্ভব নয়। তাই বর্ষা আসার আগেই মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর পাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাঠমিস্ত্রীরা নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্ষা মওসুমে এ অঞ্চলের মানুষের মালামাল পরিবহন ও চলাচলের একমাত্র বাহন হিসেবে নৌকার ব্যবহার দীর্ঘ দিনের। তাছাড়া মাছ ধরার কাজেও ব্যবহৃত হয় এই বাহনটি। সবমিলে ওই সময়টায় হাকালুকি পাড়ের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম এই নৌকা। খরা মৌসুমে জেগে ওঠা চরের বুকে নৌকা মেরামতে ব্যস্ত মাঝি-মাল্লারা। সঙ্গে রয়েছেন একাধিক দক্ষ কারিগর। কেউ কেউ তৈরী করছেন লগি-বৈঠা। কেউ আবার পুরনো নৌকার বিভিন্ন অংশ সংস্কারে মত্ত। নৌকার ছাউনি বা ছই তৈরীতে ব্যস্ত কেউ কেউ। সারক্ষণ চলছে ঠক ঠক শব্দ। আবার গুণ গুণ করে গানও গাইছেন তাঁদের কেউ কেউ।

হাকালুকি বেষ্টিত মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি, বড়লেখা উপজেলা। এরমধ্যে জুড়ির সিংহভাগ এবং কুলাউড়ার বিশাল অংশ জুড়ে হাকালুকির অবস্থান। হাকালুকির বিশাল জলধারা এখন অনেকটাই শান্ত ও ফাঁকা। সারাবছর হাকালুকিতে নৌকা চললেও এর সংখ্যা অনেক কম। একমাত্র মাছ ধরার কাজে নৌকা ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে এর বিকল্প নেই। এখানকার মানুষের চলাচলের জন্য নৌকা তখন একমাত্র মাধ্যম। সেই নৌকা মেরামতের এখনই উপযুক্ত সময়। নতুন করেও অনেকে তৈরি করছেন হাকালুকিতে চলাচলের এই বাহনটি। কেননা হাকালুকি এখন শুকিয়ে গেছে। প্রকৃতিতে এখন ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। শান্ত প্রকৃতিতে মাঝে মধ্যে হানা দিচ্ছে বৈশাখী ঝড়। তবে সময়ক্ষেপণ না করে নৌকা তৈরি বা সংস্কারে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাঝি-মাল্লা ও নৌকা বানানোর কারিগররা।

কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের দক্ষিণ সাদিপুর গ্রামের রশিম মিয়া দুঃখ করে বলেন, ‘সরকারি সুযোগ-সুবিধা না থাকায় আমরা এ ব্যবসায় অনেক কষ্ট দুঃখের মধ্যে টিকে আছি’। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রতি বছরের এ সময়ে নৌকা মেরামত বা সংস্কার আর নতুন নৌকা তৈরির হিড়িক পড়ে যায় হাকালুকি বেষ্টিত এলাকায়। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। নিয়মিত পুরনো নৌকা মেরামত বা সংস্কারের কাজ করছেন তারা। আবার অনেকেই নতুন নৌকা বানিয়ে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ভালো মানের বড় একটা নৌকা তৈরিতে প্রায় ১ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। তবে এর সংখ্যা খুব কম। আমাদের এলাকায় মাঝারি ও ছোট মাপের নৌকা বেশী বানানো হয়। একটা মাঝারি সাইজের একটা নৌকা তৈরী করতে প্রায় ৪০/৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর ছোট মাপের নৌকা তৈরী করতে প্রায় ২৫/৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

নৌকা তৈরীর কারিগর ভুকশিমইল ইউনিয়নের জলালপুর গ্রামের অধির দাস বলেন, বর্তমানে নতুন নৌকা তৈরির চেয়ে পুরনো নৌকা মেরামতের কাজই বেশি হচ্ছে। নতুন নৌকা তৈরির ক্ষেত্রে ছোট মাপের নৌকা প্রতি ৭/৮ হাজার টাকা এবং মাঝারি মাপের নৌকা তৈরিতে ১২/১৫ হাজার টাকা মজুরি পাওয়া যায়। নৌকা ব্যবসায়ী ভুকশিইল ইউনিয়নের আহছান উল্লাহ বলেন, যুগের পরিবর্তন হলেও হাকালুকি পাড়ের মানুষের জন্য এখনও নৌকার বিকল্প নেই। এছাড়া মাছ ধরার কাজেও নৌকা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইঞ্জিন চালিত নৌকার প্রাদুর্ভাব হলেও লগি-বৈঠাওয়ালা নৌকায় চলাচল করতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। এসময়টা নৌকা কেনা-বেঁচা করি।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com