১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকবাহিনির হাতে নির্মম ভাবে প্রাণ দিতে হয়েছে সাহসী বীর-মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ছগির আলীকে । মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের ভাটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ছগির আলী একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে বৃদ্ধা মাকে দেখতে বাড়ীতে এসেছিলেন তিনি, মায়ের হাতে রান্না করা খাবার খেতে বসেছিলেন। এমন সময় হাজির পাক সেনারা, স্থানীয় কয়েকজন রাজাকারের সহযোগীতায় পাক সেনারা তাকে গুলি করে হত্যা করে। লাশ পড়ে থাকে বাড়ীর উঠানে। পরে দুই-তিন দিন পর স্বজনরা বাধ্য হয়ে পৃথিমপাশার শুকনাছড়া নদীর তীরে দাফন করে। এরপর কেটে গেল অনেক বছর। নদী ভাঙনে কবরের আশেপাশের অনেক অংশই ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতি বছরই বৃষ্টির মওসুমে পাহাড় থেকে নেমে আশা বৃষ্টির পানিতে শুকনা ছড়া নদী সহ আশপাশের এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়।
যার ফলে, ছগির আলীর সংরক্ষন করা কবর টি বিলুপ্তির পথে । মুক্তিযোদ্ধা ছগির আলির এই শেষ স্মৃতি কি থাকবে। মুক্তিযোদ্ধা ছগির আলির কবর শুকনা ছড়া নদীর পারে শুধুই মাটি ছিল। এর আগে অনেক বার নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারনে কবরের মাটি দসে দসে ভেঙ্গে যায়। তার পর দীর্ঘ দিন স্হানীয় সামাজিক সংগঠন একুশে যুব সংঘ ভাটগাঁও, এর সদস্যরা নিজ উদ্যোগে প্রতি বছর কবরটি সংরক্ষন করে , পরে নবাব আলী বাকঁর খান হাছনাইন পৃথিম পাশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে, ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ,একুশে যুব সংঘ ভাটগাঁও এর সদস্য বৃন্দ সহ স্থানীয় রাজনীতিবিদ,সাংবাদিক, সমাজ সেবক ও এলাকার সকল কে নিয়ে তিনি ছগির আলির কবর সংরক্ষন করার উদ্যোগ নেন। পরে ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ মৌলভীবাজার ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল মতিন কে নিয়ে, ভাটগাঁও শহীদ ছগির আলীর কবর জিয়ারত করতে যান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। সাথে ছিলেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গ, সাংবাদিক, সমাজ সেবক একুশে যুব সংঘ ভাটগাঁও এর কার্যকারী কমিটির সদস্য বৃন্দ ও স্থানিয় এলাকাবাসী।
কবর জিয়ারতের পর বীর মুক্তিযুদ্ধা এমপি মোঃ আব্দুল মতিন, মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ছগির আলীর কবর সংরক্ষণ করার জন্য ১২ নং পৃথিমপাশার ইউ.পি সদস্য আব্দুল মনাফের জিম্মায় ৬০ হাজার টাকা নগদ অনুদান দেন। পর দিন থেকে কবর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হলেও কবরে মুক্তিযোদ্ধা ছগির আলির নাম প্লেইট আজও লেগানো হয়নি।নেওয়া হয়নি সংরক্ষণের কোন স্থায়ী পদক্ষেপ ।
গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলে বৃষ্টির পানি অতিবাহিত হয়ে শুকনা ছড়া নদী ভরে ছগির আলীর কবরে লেগে যাচ্ছে যার ফলে বেঙ্গে যাচ্ছে কবর টি। কিন্তু আজও কেও দেখার নেই। মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ছগির আলির শেষ স্মৃতি কি আমাদের মধ্যে থাকবে?
Development by: webnewsdesign.com