দেশের বিভিন্ন চা বাগান সমুহে ব্রিটিশ আমল থেকে প্রচলিত হয়ে আসা মাদকের যে বেচা কেনা ছিল তা এখনও অব্যাহত আছে। সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর সন্ধ্যা হলেই মাদক সেবন করে মাতাল শ্রমিকরা পরিবারে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে ঝগড়াঝাটি, হানাহানি, ভাঙচুরসহ নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। ফলে আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি ছাড়াও পরিবার সদস্যদেরকে বিপর্যস্ত করে ফেলছে চা বাগানের মাদকাসক্ত পুরুষরা।
নেশায় বিপর্যস্ত করে ফেলা চা বাগান এলাকাকে মাদকমুক্ত ঘোষণার লক্ষ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর জাগরণ যুব ফোরামের আয়োজেন প্রথম বারের মতো বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা কয়েকটি পথসভা শেষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১১ টায় চা বাগান থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শমশেরনগর বাজার প্রদক্ষিণ শেষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জাগরণ যুব ফোরামের আয়োজনে মাদকবিরোধী শোভাযাত্রা ও সমাবেশের মূলে ছিল চা শ্রমিক, ছাত্র ও যুবকরা।
জাগরণ যুব ফোরামের সভাপতি মোহন রবিদাসের সভাপতিত্বে ও বাবুল মাদ্রাজীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- শমশেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, ইউপি সদস্য ইয়াকুব মিয়া, সীতারাম বীন, শমশেরনগর চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাক শ্রীকান্ত কানু গোপাল, সুজন লোহার, আপন বাউরী, মনি শংকর রায় ও নারী নেত্রী আশা আরনাল প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, চা শ্রমিকদের উপার্জিত অর্থে যাতে কোন কাজে না লাগে, শ্রমিকরা যাতে উন্নত না হতে পারে, এই শ্রমিকরা সারাজীবন যাতে চা বাগানের দাসত্বের গন্ডির বেড়াজালে আটকে থাকতে পারে সেজন্য ব্রিটিশদের আমল থেকে মদের ব্যবস্থা চালু করা হয়েয়েছিল। সেটি এখন পর্যন্ত চা বাগানে প্রচলিত আছে। চা বাগানের লেবার লাইনের মধ্যে অবৈধভাবে নিজস্ব পদ্ধতিতে উৎপাদিত হচ্ছে মাদক।
অবাধে গড়ে উঠা মদের পাট্টায় তৈরি হওয়া মদের মধ্যে ‘চোলাই’ ও ‘হাড়িয়া’ মদ নামে পরিচিত। চা বাগানে এসব মদ মদ পান করে নেশাগ্রস্ত ও মাথাল হয়ে পরিবার, সংসারে ঝগড়াঝাঁটি করে ও জিনিসপত্র ভাঙ্গচুর করে বিপর্যস্ত করে তোলে। বর্তমানে চা বাগানে মাদকাসক্ত বস্তি একটি অংশও সম্পৃক্ত হচ্ছেন। চা বাগান শ্রমিকরা বলেন, বাগানে যারা মদ পান করে তারা প্রতি রাতে উপার্জিত সব টাকা দিয়ে মদ কিনে খায়। এরপর মাতাল হয়ে ঝগড়াঝাটি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
এসব মদ পান করে যুব সমাজ ধ্বংস, মানুষের জীবন যাত্রায় ব্যাঘাত, পরিবেশ বিনষ্ট, শারীরিকভাবে সমস্যাসহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরনে চা বাগান সমুহে অবৈধভাবে মদের পাট্টাসমুহ বন্ধ করে অবিলম্বে মাদক মুক্ত চা বাগান ঘোষণার জন্য সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে বক্তারা দাবি জানান।
Development by: webnewsdesign.com