ভারী বর্ষণ ও উজানে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার অন্যান্য নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব উপজেলার সড়ক, ঘরবাড়ি, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে জেলার শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। জেলা সদর থেকে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও সাচনা বাজারের সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। উচুস্থানের সন্ধান করছে মানুষ ইতোমধ্যে তাহিরপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা কবলিত মানুষ। তবে এখনো ত্রাণ সামগ্রি পৌছায়নি মানুষের হাতে।
গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে আটটি বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা তাহিরপুর ও তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার। এই দুই উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১৬ হাজার পরিবারের ৮০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২০ বছরের মধ্যে উজান থেকে এত ব্যাপক পরিমাণে ঢল নামেনি। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রশাসন বন্যা হয়নি বলে ঢিলেমি করছে। বৃষ্টি বন্ধ না হলে মানুষের ভাগ্যে কি আছে বলা যাচ্ছে না। এভাবে বৃষ্টি চলতে থকালে সকল গ্রাম ডুবে যাবে। মানুষ যাবে কোথায় তাও জানে না। কারণ হাওরে কোন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নেই।
তাহিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যেগুলোতে পানি ওঠেনি, সেগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু কিছু স্কুলে বন্যাকবলিত লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এই মুহূর্তে মানুষের শুকনো খাবার প্রয়োজন। তাঁরা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। জেলার দিরাই, শাল্লা, দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাড়িঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলার ২০০ শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে। অবস্থার উন্নতি হলে আবার পাঠদান শুরু হবে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা কোনো স্কুল প্লাবিত হলে বা শিক্ষার্থীদের জন্য ঝুঁকি মনে করলে, সেটির পাঠদান স্থগিত করতে পারবেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেছেন, জেলায় নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র পস্তুত রাখা হয়েছে। কেউ চাইলে সেখানে যেতে পারবেন। একই সঙ্গে বন্যাকবলিত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া আছে।
Development by: webnewsdesign.com