শীতে বাড়ছে রোগবালাই, ঝুঁকিতে শিশুরা

বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ১:৫২ অপরাহ্ণ | 892

শীতে বাড়ছে রোগবালাই, ঝুঁকিতে শিশুরা

টুডেনিউজ ডেস্ক:: দেশের বিভিন্ন জায়গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করায় জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই সময় অন্যান্য রোগের পাশাপাশি শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, জ্বর, টনসিল—শীতের এসব রোগবালাইয়ে বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। তবে বৃদ্ধদের ক্ষেত্রেও এই ঝুঁকি কম নয়।
চিকিৎসকদের এ অভিমতের বাস্তব প্রতিফলন দেখা গেলো ঢাকা শিশু হাসপাতালে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) বিশেষায়িত এ হাসপাতালটি ঘুরে দেখা যায়, এর বহির্বিভাগ, শিশু অ্যাজমা সেন্টারসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা কক্ষে রোগীদের বেশ ভিড়।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও শিশু মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান বললেন, চলতি শৈত্যপ্রবাহে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও বেড়ে গেছে।
তিনি জানান, শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৪ দিন আগেও প্রতিদিন রোগী হতো ১৫০ থেকে ২০০ জন। শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর রোগী আসছে ২৫০ থেকে ৩০০ জন। আবার বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন হলেও এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ জন।তিনি বলেন, শিশুরা বেশি সেনসিটিভ হওয়ায় ঠান্ডায় নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, চাপ বেড়ে যাওয়ায় ৬০০ শয্যার শিশু হাসপাতালে সবাইকে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে শিশুকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর অন্য কোনও জটিলতা থাকলে আরেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
পাতলা পায়খানা আর বমি নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে এসেছে ৬ বছরের সবেরুন আক্তার খুশী। তার সঙ্গে আছেন বাবা ও নানি রিজিয়া খাতুন। রিজিয়া খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গ্রামের বাড়িতেও ডাক্তার দেখিয়েছিলেন, কিন্তু কমেনি। পরে গত বুধবার এখানে আসেন।
নিউমোনিয়া নিয়ে ১৮ দিন ধরে ভর্তি আছে সাড়ে ৩ বছরের সুমী। সাভার থেকে আসা সুমীর মা শোভা রানী সরকার বলেন, সাভারেও ডাক্তার দেখানো হয়েছিল, কিন্তু সারেনি। এরপর এই হাসপাতালে নিয়ে আসা।
রাজধানীর তেজগাঁও থেকে ৫ মাসের মেয়ে ফাহিয়া ইসলাম এশাকে নিয়ে এসেছেন মা রুমা আক্তার। তিনি জানান, তার মেয়ের নিউমোনিয়া হয়েছে।
যেহেতু মৌসুম বদলাচ্ছে তাই অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে মন্তব্য করে ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা অথবা রাত পর্যন্ত শিশুদের জন্য কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। ঠান্ডার মধ্যে যথাসম্ভব শিশুদের কম বের করা ভালো। আর যেসব শিশু স্কুলে যাচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে ধুলা এড়িয়ে চলতে হবে এবং অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

শীতের শাকসবজি ও ফলমূল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব সবজি খাওয়াতে হবে শিশুদের, সঙ্গে তরল খাবার।
শীতজনিত রোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত ভাইরাল ফিভার ও ঠান্ডা-কাশি শীতের রোগ। এই জ্বরে তাপমাত্রা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রিতে উঠে যায় শিশুদের। আর ঠান্ডা-কাশি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে নিউমোনিয়া হয়। এছাড়া আছে ডায়রিয়া।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বক্ষব্যাধি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শীতের সময়ে বাতাস ঠান্ডা থাকে, আর এই বাতাস নিশ্বাসের সঙ্গে নেওয়ায় ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্র ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। আর এর ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের প্রটেকশন কমে যায়।
বেশি ভিড়ে শিশুদের না নিতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই সময় বাচ্চাদের ভিড় বা অনুষ্ঠানে নেওয়া যাবে না। যেমন, বিয়ের অনুষ্ঠানে অনেক মানুষ থাকেন। সেখানে যদি একজন মানুষও ভাইরাল ইনফেকশনে আক্রান্ত থাকেন, তাহলে তিনি হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন। এটা সহজেই শিশুরা ইনহেল করবে। সেজন্য শপিং মলসহ যেকোনও ভিড়ে এই সময়ে শিশুদের না নেওয়াই ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ করে পর্দা দিয়ে দিতে হবে। তবে এর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জরুরি শিশুর ‘এপ্রোপ্রিয়েট ক্লোদিং’। অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শীতের সঙ্গে শিশুদের পোশাকের ভীষণ সম্পর্ক রয়েছে। শীতের সময়ে বেশি তাপমাত্রা না হলেও অভিভাবকরা অনেক বেশি কাপড় পরান, এতে শিশুরা ঘেমে যায়। আর এই ঘামে বেশি আক্রান্ত হয় তারা। তাই শিশুর শরীর অনুযায়ী, তাপমাত্রা বুঝে পোশাক পরানোর পরামর্শ দেন তিনি।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com