মো. শাহ আলম সুমন, কুলাউড়া: মৌলভীবাজারের জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলায় প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এতে দুই উপজেলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কুলাউড়া সাব জোনাল অফিসের অধীনে ৯০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এ ছাড়াও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্যও লোডিশেডিং ছাড়াও বিদ্যুৎ বিভ্রাটে বিপাকে গ্রাহকরা।
সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, চাহিদার চেয়ে তিনভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ফিডারভিত্তিক (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতাধীন একটি এলাকা) লোডশেডিংয়ের সময়সূচি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে এক ঘণ্টা পর পর এলাকা ভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ সংকট আরো বেড়েছে। একটানা দুই-তিনঘন্টা করে দিনে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। শহরের বাইরে গ্রাম এলাকায় এ সংকট আরো বেশি।
বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র কুলাউড়া নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের আওতায় কুলাউড়াসহ পাশের জুড়ী উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকায় ছয়টি ১১ কেভি ফিডার ও দুটি ৩৩ কেভি ফিডার লাইন আছে। সেখানে গ্রাহকের সংখ্যা ৩২,২০০। আর জুড়ীতে তিনটি ১১ কেভি ও দুটি ৩৩ হাজার কেভি ফিডার লাইন রয়েছে। গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার। দুই উপজেলায় প্রতিদিনের চাহিদা বর্তমানে ১৮ মেগাওয়াট। সেখানে এখন সর্বোচ্চ ৬ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কুলাউড়া সাব জোনাল অফিস সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়ার জয়চণ্ডী, পৃথিমপাশা, টিলাগাঁও, হাজীপুর, শরীফপুর, বরমচাল ও ভাটেরা ইউনিয়নে বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন ৪৮ হাজার। প্রতিদিন বিদ্যুৎয়ের চাহিদা রয়েছে ৮ মেগাওয়াটের বেশি। সেখানে বর্তমানে ২ থেকে আড়াই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের সময়সীমা এক ঘণ্টা করে নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকছে। দিনে-রাতে প্রতিবার ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। গত এক সপ্তাহ থেকে বিদ্যুৎ সংকট আরো তীব্র হয়ে ওঠেছে। লোডিশেডিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকতে হচ্ছে।
কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম. আতিকুর রহমান বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে রাত আটটায় দোকানপাট বন্ধ করতে হচ্ছে। সকালে দোকান খোলার পর দিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আগে পৌর শহরে কম লোডশেডিং হতো। বর্তমানে ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের সাথে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় ব্যবসায়ীদের চরম ক্ষতি হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কুলাউড়া সাব জোনাল অফিসের এজিএম নাজমুল হক তারেক মোবাইলে বলেন, আমাদের গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তিনভাগের এক ভাগ বিদ্যুৎ পাচ্ছি আমরা। তাই দিনে গড়ে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
বিউবো কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গণি মোবাইল ফোনে বলেন, আমাদের চাহিদা প্রতিদিন ১৮ মেগাওয়াট। পাচ্ছি ৬ মেগাওয়াটের কম। দিনে এক ঘণ্টা করে দুটি ফিডার চালু রাখা হয়। এভাবেই ধারাবাহিকভাবে সবকটি ফিডারের গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি । গত কয়েকদিন ধরে চাহিদার তুলনায় মাত্র এক তৃতীয়াংশ পাচ্ছি।
Development by: webnewsdesign.com