ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ-পশ্চিম লংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন টিলাগাঁও স্টেশন। কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে টিলাগাঁও বাজার। যাকে সহজ ভাষায় বলা যায় যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
শুধু যে যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু তা কিন্তু না সৌন্দর্যের দিক দিয়ে লোকালী এমন স্টেশন খুব কমই আছে।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় লেখক ও কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ যখন “আমার আছে জল” উপন্যাস লিখেন তখন “সোহাগী” নামের স্টেশন দিয়ে কাহিনী শুরু করেন। স্টেশনটির কত সুন্দর নাম “সোহাগী”। কিন্তু উপন্যাসটি দিয়ে যখন টেলিফিল্ম রচনা করেন তখন প্রকৃত সোহাগীর দেখা পান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশন।
রেলওয়ে স্টেশনটি সমতল হতে অপেক্ষাকৃত উচু জায়গা, বিশাল লম্বা প্লাটফর্ম, পাশে বিশাল খেলার মাট, বড় বড় শিমুল গাছ, আমগাছসহ বিভিন্ন গাছের সমারোহ, স্টেশনের সামনে বিশাল স্পেস এককথায় অসাধারণ একটি স্টেশন।
টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশন এর সাথে আমাদের পরিচিতিটা যেমন খুব বেশি তারচেয়ে বেশি হচ্ছে অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন আমরা টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশনটি ডিঙিয়ে স্কুলে যেতে হত। স্কুলে যাওয়া-আসা এবং স্কুলের মধ্যবিরতি স্টেশনের চেহারাটা দেখতে হত। সকালে যখন স্কুলে যেতাম পরিচিত কিংবা অপরিচিত শত শত মানুষের দেখা মিলত স্টেশনে। একদিকে জনাকীর্ণ, অন্যদিকে স্টেশনের ভেতর অনেকগুলো দোকান। ছিল যাত্রীদের জন্য সুন্দর বসার একটি স্পেস।
ট্রেনে যখন ঢাকা থেকে কুলাউড়া আসি, কুলাউড়া থেকে আবার যখন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই জানালার দিকে একনজর তাকিয়ে দেখতে হয় প্রিয় স্টেশনকে। কারণ, সত্যিই অসাধারণ এবং স্মৃতিময় একটি রেলওয়ে স্টেশন।
ভাবতে অবাক লাগে এইরকম ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ একটি রেলওয়ে স্টেশন প্রায় এক দশক থেকে বন্ধ। স্টেশনটি বন্ধের অজুহাত হচ্ছে লোকবল সংকট।স্টেশনটি বন্ধের অজুহাত সত্যিই একটা হাস্যকর ব্যাপার। অথচ খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশের প্রতিটি রেলক্রসিং এ গেটম্যান এর ব্যবস্থা রেলওয়ে বিভাগের অত্যন্ত যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। যা বাংলাদেশের বেশিরভাগ জায়গায় বাস্তবায়িত। যেখানে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মত স্বপ্নের মেগা প্রকল্প সরকার বাস্তবায়ন করছে সেখানে টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশন জনবলের অভাবে বন্ধ থাকা খুবই দুঃখজনক।
টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ হওয়ার পর থেকে স্টেশন চালুর দাবিতে অতীতে খন্ড খন্ড কিছু আন্দোলন হয়েছিল। যা তেমনটা জোরালো ভূমিকা রাখেনি।
কারণ, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায় করা সম্ভব হয়না।
আর দাবি আদায়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে হয়। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।
টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশন চালুর দাবিতে বর্তমান আন্দোলন একটি সফল সামাজিক আন্দোলন। দলমত-নির্বিশেষে “ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ টিলাগাঁও” এর ব্যানারে বর্তমান চলমান আন্দোলন, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি থেকে শতভাগ আশাবাদী প্রিয় টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশনটি আবার চালু হবে।
আবারো টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন থামবে, ট্রেন ছেড়ে যাবে।
সবকিছু চলবে আগের গতানুগতিক নিয়ম ধারায়।
দক্ষিন-পশ্চিম কুলাউড়ার হাজার হাজার মানুষের যোগাযোগের উন্নয়নে স্টেশনটি চালু করা সময়ের দাবি। আশা করি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ এই রেলওয়ে স্টেশনটি সকল জটিলতা কাটিয়ে রেলওয়ে বিভাগ, রেল মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যন্ত বিষয়টি পৌঁছেছে।
দাবি আদায়ে যারা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করা যাবেনা। আপনারা পেরেছেন দলমত-নির্বিশেষে একটি সফল সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে। আপনাদের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বৃথা যাবেনা। টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশন চালু হবে।
আপনারা ইতিহাস হয়ে থাকবেন।
সর্বশেষ একটি কথা বলবো, একটি জাতি উন্নত হতে হলে প্রথমে তার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা যেখানে উন্নত সেখানে শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত।
সর্বোপরি, সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সুদৃঢ় হয়।
টিলাগাঁও রেলওয়ে স্টেশনটি যাতে খুব দ্রুত চালু হয় রেলওয়ে বিভাগ তথা সংশ্লিষ্ট সকলের সাহায্য কামনা করি।
মোঃ ইমরান আশরাফ
র্যাব সদস্য,
এমএসএস শেষ পর্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ।
Development by: webnewsdesign.com