সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস সাধারন মানুষের কাছে আতংকের এক নাম।ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।কিন্ত মুখ খুলতে নারাজ অনেকেই।এ কারনেই ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যান ঘুষ বানিজ্যে জড়িত কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।হয়রানি,ঘুষ,দুর্নীতি,জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে এ অফিস।অভিযোগ উঠেছে এসি ল্যান্ড, সার্ভেয়ার এডি এম রুহুল আমিন ও অফিস সহকারি সত্য বাবুর যোগসাজেসে রমরমা ঘুষ বানিজ্য চলে আসছে এ অফিসে।
জানা যায়,উপজেলার ছৈলা-আফজলাবাদ ইউপির ব্রাক্ষনজুলিয়া মৌজার এস এ খতিয়ান ৫৬৬ ও নামজারি খতিয়ান ৮৩০,শ্রেনী আমন ও বাড়ি রকম নালিশা প্রায় ৩৬ শতক ভূমি ভোগ দখল করে আসছেন জনৈক জহুরা বেগম ও তার স্বামী আজিজুর রহমান।গত ২৭ জুলাই সুনামগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত থেকে ৯০৩ স্বারক মুলে প্রাপ্ত পত্রে পৃষ্টাদেশে গত ২৭ আগষ্ট আদেশের পরিপেক্ষিতে সরকারী সার্ভেয়ার এডি,এম রুহুল আমিন উপজেলার ব্রাক্ষনজুলিয়া মৌজায় সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।যদিও ঐ নারীর বাড়ি ঘর,জায়গা জমি দীর্ঘদিন ধরে তার নিজ ভোগ দখলেই রয়েছে।জমি ভোগদখল রিপোর্ট দেওয়ার কথা বলে ঐ নারীর কাছে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দাবি করেন সার্ভেয়ার এডি এম রুহুল আমিন।টাকা না দিলে প্রতিবেদন ঐ নারীর বিপক্ষে দেবেন বলে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেন সার্ভেয়ার।
গত ১ সেপ্টেম্বর সময় দুপুর ১.১৪ মিনিট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে সার্ভেয়ার এডি এম রুহল আমিন এর নিজ কক্ষে ঐ নারী সরাসরি ঘুষের ১০ হাজার টাকা লেনদেন করেন।পরবর্তীতে গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ ঘটিকা থেকে বিকাল ৩ ঘটিকার মধ্যে আবারো সার্ভেয়ার রুহুল আমিনের কক্ষে ওই নারী ঘুষের আরো ১০ হাজার টাকা লেনদেন করেন।এসময় সার্ভেয়ার রুহুল আমিন ঐ নারীকে সিল স্বাক্ষর ছাড়াই একটি কাগজ প্রদান করেন।ঐ নারী তার পক্ষে রিপোর্টের নমুনা কাগজ নিয়ে সুনামগঞ্জ চলে যান।
পর দিন সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে আবোরো উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আসেন।ঘুষের বাকী ৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করার পর তার পক্ষে রির্পোটের কাগজে সিল স্বাক্ষর করে দেন সার্ভেয়ার রুহুল আমিন।এ সময় ঘুষের টাকার লেনদেনের ভিডিও ধারন করা নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।পরে এঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।আর ঐ নারী কতৃক ভূমি অফিসে সার্ভেয়ার এডি এম রুহুল আমিনকে দেওয়া ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
এতে অফিস সহকারি সত্যবাবুসহ প্রধান কর্মকতা কর্মচারিদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি,ঘুষ লেনদেনের ভিডিও ভূমি অফিসের আড়ালে নেপথ্যে ঘুষ বানিজ্যির রহস্য জনসম্মুখে বেরিয়ে আসছে।ঘুষ বানিজ্যের স্বর্গরাজ্য উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস এর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে নিজ ভুয়া সিল,ভুয়া জাল দলিল,ভুয়া পর্চা,কাগজ পত্র সৃজন করে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে হযরানির অভিযোগ উঠেছে।উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস এর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ।
উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভার প্রায় ৩ শত ৫টি মৌজার রেকর্ড পত্র সামনে রেখেই নামাজারি,পক্ষে-বিপক্ষে,সরেজমিন রিপোর্ট দেয়ার কথা বলে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ঘুষ বানিজ্য চলে আসছে সেবা নিতে আসা ভূমি মালিকদের অভিযোগ। একটা নামজারিতে ১ হাজার ১৫০ টাকার বিপরীতে ১০-১৫ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এদের কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ছেন।অনলাইনের আবেদন ফি ৫শত টাকা আদায়, দাবিকৃত ঘুষের অর্থ না দিতে অস্বীকার করলে নানা টালবাহানা করে কর্মকতা ও কর্মচারিরা জমির মালিকদের হয়রানি করছেন প্রতিনিয়ত।নামজারি, মিস কেস,মিস আপিল,সার্ভে রিপোর্ট,চান্দিনা ভিটা,এমপি কেস,খাস জমি বন্দবস্ত,ভিপি খাজনা দাখিলা থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ঘুষের রমরমা বানিজ্য।
এসব অনিয়ম অপরাধে জড়িত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষজন।
এ বিষয়ে সার্ভেয়ার এডি এম রুহল আমিনের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার পর ঘুষের টাকার ভিডিও ভাইরাল এমন বিষয়টি জানতে চাইল তিনি অস্বীকার করে ফোনের লাইন কেটে দিয়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে ছাতক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসলাম উদ্দিন তার উপর আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,ভিডিওটি আমার নজরে আসার সাথে সাথে তাৎক্ষনিক সার্ভেয়ার রুহুল আমিনকে শোকজ করা হয়েছে।তিনি আরো বলেন,বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Development by: webnewsdesign.com