মনু নদীর ভাঙনে এক এক করে বিলীন হচ্ছে প্রাচীনতম কাউকাপন বাজারের একাংশ। গত ছয় দিনে বাজারের ১০টি দোকান নদে বিলীনের দিকে।গত দুই বছরে বাজারে অন্তত ৪০টি দোকান বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কাউকাপন বাজারে ক্রমাগত ভাঙনের কারণে বাজারের মাঝখানে প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়া কুণিমোড়া-তারাপাশা পাকা সড়কটিও হুমকীর মুখে পড়েছে। এ সড়কটি রক্ষা নিয়ে এলাকাবাসী শঙ্কায় পড়েছে। সড়কটি ভেঙে গেলে নদের পানি ঢুকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যেতে পারে।
এলাকাবাসী জানান, গত ২৭ জুন থেকে পরদিন ২৮ জুন বিকেল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হয়। এ ছাড়া মনু নদ দিয়ে উজানের পাহাড়ি ঢল নামে। এতে নদে পানি বেড়ে যায়। ২৮ জুন বিকেলের দিকে কাউকাপন বাজারের পূর্ব পাশে নদের বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এতে বাঁধের পাশে থাকা পুলক দের ওষুধ, ফজলু মিয়ার বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, মাহমুদ আলীর ডেকোরেটর, রফিক মিয়ার চায়ের দোকান ও ওয়াহিদ মিয়ার মুদি দোকানের একাংশ নদে বিলীন হয়ে যায়।
একই স্থানে গত সোমবার রাত ১২টার দিকে হাজির মিয়ার চা, অমল দের শিশুদের খেলনা ও জুতা, আবু মিয়ার সবজির আড়ত, আপ্তাব মিয়ার ধান-চাল এবং জায়েদ মিয়ার পোলট্টির দোকান নদে ধসে পড়ে। সবগুলো দোকান টিনশেডের আধাপাকা ছিলো। কেউ কেউ ভাঙন টের পেয় আগেই দোকোনের মালামাল সরিয়ে ফেলেন। আবার অনেকে মালামাল সরানোর সময় পাননি।
কাউকাপন বাজার এলাকাটি নদের বাঁধের ওপর পড়েছে। সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট। নদে পানি কমেছে। সড়কের পাশ ঘেঁষে বাঁধে ভাঙন ধরেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী হাজির মিয়া বলেন, “চায়ের দোকানটাই সম্বল আছিল (ছিলো)। চা বেচিয়া (বিক্রি) করে পরিবার চালাই। রাইতে (সোমবার) খবর পাইয়া আইয়া দেখি দোকান ভাঙি গাঙে (মনু নদ) পড়ি গেছে। অখন চলতাম কিলা!”
অমল দে জানান, ‘বাড়ি কান্দাত (নিকটে) থাকায় দ্রুত এসে কিছু মালামাল সরাতে পেরেছেন। বাকিটা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
কাউকাপন বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মখলিছ মিয়া বলেন, ‘মনু নদ একসময় আরও পূর্ব দিকে ছিলো। একটু একটু করে ভেঙে তা বাজারের কাছাকাছি চলে এসেছে। দুই বছরে বাজারের অন্তত ৪০টি দোকান নদে বিলীন হয়ে গেছে। সড়কটি ভেঙে গেলে বাজারটি একবারে ধ্বংস হয়ে যাবে। পাশাপাশি বাঁধ ভেঙে নদের পানি ঢুকে বাজারের পশ্চিম পাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হবে।
এলাকাবাসী বলেন, ‘২০১৭-১৮ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে বাজারের ভাঙনকবলিত কিছু স্থানে কাঠের খুঁটি স্থাপন করে বেড়া দিয়ে এর ভেতর বালুর বস্তা দেওয়া হয়েছিলো। গত বছরের অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তা ভেসে যায়।’
হাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু বলেন, ‘ভাঙনকবলিত স্থানের আশপাশের এলাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়বে কাউকাপন বাজারসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। উক্ত বিষয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
পাউবোর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘জেলা সদর, রাজনগর ও কুলাউড়ার প্রায় ৬৭টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে তা স্থায়ীভাবে সমাধানের জন্য আমরা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এই প্রকল্পের জন্য প্রায় এক হাজার টাকা বরাদ্দ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। কাজটি শেষ করতে বছর খানেক সময় লাগবে।’
অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাঁধ ঘেঁষে নির্মিত ওই দোকানগুলোর কারণেও বাঁধে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় ফাটল ধরছে। এবিষয়ে জেলা প্রশাসকক ও কুলাউড়া ইউএনও-কে বিষয়টি অবহিত করেছি। ওই দোকানদারদের অন্যত্র পুনর্বাসন না করলে আমাদের কাজ করতে সমস্যা হবে।’
Development by: webnewsdesign.com