কুলাউড়ায় অনুমতি ছাড়াই বনজ-ফলদ গাছ কাটার হিড়িক

মঙ্গলবার, ২৫ মে ২০২১ | ১:৫২ অপরাহ্ণ | 248

কুলাউড়ায় অনুমতি ছাড়াই বনজ-ফলদ গাছ কাটার হিড়িক

নিজস্ব প্রতিনিধি:: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কাকড়া পুঞ্জিতে বনজ গাছ কাটার হিড়িক চলেছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই রেহানা চা বাগান কর্তৃপক্ষ গাছগুলো কাটছে। এখানে অন্যান্য গাছের ভিতর বন্যপ্রাণীর খাবার বিভিন্ন ফলাদির গাছ রয়েছে।

পুঞ্জিবাসী বলছেন, হাজারখানেক গাছ কাটা হয়েছে। রোববার বিকালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পরিদর্শন করে একই কথা বললেন।



এসময় বাপা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাপা মৌলভীবাজার আঞ্চলিক শাখার সমন্বয়ক এ এস এম সালেহ সোহেল, বাপা হবিগঞ্জ আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল ও বাপা সিলেট আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ও বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মা ও সাধারণ সম্পাদক সুমন দেববর্মা  প্রমূখ।

বাপা কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল জানান, পানজুমে গিয়ে দেখা যায় হাজারখানেক গাছ কাটা হয়েছে। পরিদর্শন করে মনে হলো যেন গাছ কাটার হিড়িক চলছে। হাজারের উপরে বনজ-ফলদ গাছ কেটে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে।

পুঞ্জিবাসী অভিযোগ করে বলেন, প্রায় ৭/৮ বছর ধরে বাগান কর্তৃপক্ষ অন্তত ২০টি ছোট-বড় জুম দখল করে সেখানে চা চারা রোপণ করছে। এছাড়া পুঞ্জি থেকে বের হওয়ার প্রধান রাস্তাটি বন্ধ করে দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ। গত ২/৩ বছরে তাদের কবরস্থান দখল করে সেখানেও চায়ের চারা রোপণ করা হয়েছে। বর্তমানে তারা লাশ সৎকারের জায়গা খোঁজে পাচ্ছেন না।

পুঞ্জিতে বসবাসকারী রাবেয়া আক্তার অভিযোগ করে বলেন, রেহানা চা বাগানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় পুঞ্জির লোকজনকে হুমকি দিচ্ছেন। তারা হুমকি দিয়ে জুমের পান গাছ কেটে ফেলা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেয়।

পুঞ্জির বাসিন্দা বিনিতা রেমা জানান, উচ্ছেদের ভয়ে তারা তাদের পুরনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গীর্জা ঘরটি সংস্কার করতে পারছেন না। জুম দখলের চেষ্টায় যেকোনো সময় তাদের উপর হামলা চালানো হতে পারে। সেজন্য তারা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।

পুঞ্জির শতবর্ষী বাসিন্দা এডুয়েন মারলিয়া জানান, এই পুঞ্জিতে আমার জন্ম। এই পুঞ্জিতে অনেক জুম ও পুরোনো গাছ ছিল। এখন আর এগুলো নেই। সব দখল করে নিচ্ছে বাগান কর্তৃপক্ষ। অনেকেই এখান থেকে অন্যত্র চলে গেছে। এভাবে চললে তারা পুঞ্জিতে বসবাস করতে পারবেন না। তিনি প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।

পুঞ্জির হেডম্যান জনপল চিছিম জানান, মাত্র ১৭ পরিবারের বসবাস কাঁকড়াছড়া পুঞ্জিতে। পুঞ্জি ছেড়ে প্রায় ৩০টি পরিবার চলে গেছে। রেহানা চা বাগান কর্তৃপক্ষ যেভাবে একের পর এক জুম দখল করছে, তাতে আমরা পুঞ্জিবাসী নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। তাছাড়া এরকম ঘটনা প্রশাসনকে জানালে পুঞ্জি থেকে উচ্ছেদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। অথচ মালিকপক্ষ আমাদের জমিটি লিজ দিয়েছিল। যার কাগজপত্র আছে।

তিনি বলেন, তারা বন্যপ্রাণীর খাওয়ার বিভিন্ন ফলের গাছও কাটছেন।

রেহানা চা বাগানের ব্যবস্থাপক একে আজাদ জানান, পুরো জায়গাটি চা বাগানের। এখানকার কোমো জায়গা কোনো গোষ্ঠীকে লিজ দেওয়া হয়নি। পুঞ্জিবাসী মিথ্যাচার করছে। আর বাংলাদেশ চা বোর্ডের নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর বাগান এলাকায় চা গাছের চারা রোপণ করে জায়গা বৃদ্ধি করা হয় সামান্য কিছু গাছ কেটে। এখানেও বাগানের জায়গায় সেই নিয়মানুযায়ী চায়ের চারা রোপণ করা হচ্ছে। জুম দখল করা হয়নি।

গাছ কাটার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চা বোর্ডের অনুমতি আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না অনুমতি নেওয়া হয়নি।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন অবনতি না হয় সে বিষয়ে আমি উভয় পক্ষকে বলেছি। সমাধানের চেষ্টা চলছে।

সৌজন্যে:: আইনিউজ

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com