পঞ্চাশ শয্যাবিশিষ্ট জেলার কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাসেবা চলছে দুইজন চিকিৎসক দিয়ে! চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা। উপজেলার ৪ লাখেরও অধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে। এতে করে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে চাপের মধ্যে থেকেও সাধ্য মতো সেবা দেয়া হচ্ছে।
সরকার যখন স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক কাজ করছে। অতচ ৪ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবাদানকারী এই হাসপাতালের চিকিৎসক ও জনবলের সংকটের খরা যেনো কাটছেই না। গত তিন বছর ধরে ৪-৫ জন মেডিকেল অফিসার ও কয়েকজন উপসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে চলছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। যার ফলে এ হাসপাতাল থেকে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে মোট ৩৮টি পদের মধ্যে মাত্র ৯পদে কর্মরত ডাক্তার রয়েছেন ৯জন। ২৯ পদই শুণ্য। এর মধ্যে ১টি পদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরুল হক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দায়িত্বে আবাসিক মেডিকেল অফিসার জাকির হোসেনসহ মাত্র ২জন। বাকি বিশেষজ্ঞ পদের মধ্যে ৩জন এই হাসপাতালে নিয়োগকৃত হলেও বর্তমানে প্রেষণে কর্মরত আছেন মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে। কিন্তু বেতন ভাতাদি সবকিছু এই হাসপাতালের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। তবে শত সমস্যা ও সংকট থাকার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। চলতি মাস শেষ হওয়ার প্রায় ১০ দিন আগেই ৫৪ টি সন্তান প্রসব (নরমাল) করাতে সক্ষম হয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, বিগত ২০১৫ সালে হাসপাতালে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩০ জন বিশেষজ্ঞ ও মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর অধিকাংশ চিকিৎসক প্রেষণে ও বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর থেকেই চিকিৎসক সংকট কাটছেনা এই হাসপাতালে।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগ, আবাসিক ও বহির্বিভাগে সহ¯্রাধিক মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। মাত্র ৪-৫ জন চিকিৎসক দিয়ে এত মানুষের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন কর্মশালা, জেলা সদরে বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশ নিতে হয়। তখন চিকিৎসা নিতে আসা মানুষেরা দূর্ভোগে পড়েন। চিকিৎসক সংকটের কারণে উপসহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান দুর্ভোগ আছে তবে আগের তুলনায় অনেক ভালো এখন। দ্রুত গতিতে সকল সংকট ও সমস্যা সমাধানের দাবী জানান ভোক্তভোগীরা।
কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূরুল হক বলেন, চিকিৎসক ও লোকবল সংকটে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। তবুও আমরা চেষ্টার ক্রুটি রাখি না সেবা দিতে। শত সমস্যা ও সংকটের পরও আমরা চাই জনগণ কে ভালো সেবাটাই দিতে। হাসপাতাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ৫ জন সুইপারের মধ্যে সদর হাসপাতালে ২ প্রেষণে থাকায় আমাদের বেতনের টাকা দিয়ে ২ জন্য সুইপার রাখা হয়েছে। কারণ আমরা চাই সেবা নিতে আসা কেও যেনো অভিযোগ না করতে পারে। সব সময়ই চেষ্টা করি সাধ্যমত সর্বোচ্চ সেবা দিতে।
মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন শাহজাহান কবির চৌধুরী বলেন, বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের চিকিৎসকদের পদায়ন হলেই চিকিৎসক সংকট দূর হবে বলে আশা। চিকিৎসক সংকট সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হলেই জনবল সংকট দূর হবে। এর ফলে সরকারি হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্যসেবায় আরও এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
Development by: webnewsdesign.com