টুডেনিউজ ডেস্ক ::
গাছেরও প্রাণ আছে,একথা তো সবারই জানা। পৃথিবীতে এখনো পর্যন্ত মোট তিন লাখ ৯০ হাজার ৯শ’প্রজাতির বিভিন্ন গাছ আবিষ্কার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ। যেমন-ফলজ,বনজ,কাঠ বা মাংসাশী গাছ। তবে হেঁটে চলা গাছের কথা কি শুনেছেন কখনো? অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়! গাছ আবার হাঁটতে পারে নাকি?
না,কোনো অলৌকিক ঘটনার কথা হচ্ছে না। কথা হচ্ছে না ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর জাদুকরী হিউম্যানয়েড ট্রি নিয়েও। দক্ষিণ আমেরিকার গহীন ক্রান্তীয় অরণ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এমনই এক আশ্চর্য উদ্ভিদ প্রজাতি,যারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম। আর এই বিশেষ ক্ষমতার জন্যই সাধারণ মানুষের কাছে এই উদ্ভিদ প্রজাতি পরিচিত ‘ওয়াকিং পাম’ (Walking Palm) নামে। অবশ্য বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই উদ্ভিদ প্রজাতির নাম ‘সক্রেটিয়া এক্সোরিজা’ বা ‘ক্যাশাপোনা’। কিন্তু কোথায় দেখা মেলে এই বিশেষ উদ্ভিদ প্রজাতির?
ইকুয়েডরের (Ecuador) রাজধানী কুইটো (Quito) থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুমাকো বায়োস্ফিয়ার। মূলত এই বায়োস্ফিয়ারেই বাস ক্যাশাপোনা পাম গাছের। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে এই সংরক্ষিত অরণ্যে গবেষণা করতে গিয়ে আশ্চর্য এই উদ্ভিদ প্রজাতির সন্ধান পান স্লোভাক ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সেসের গবেষক পিটার ভ্রানস্কি। শুধু এই উদ্ভিদ প্রজাতিই নয়,সঙ্গে ব্যাঙ,আরশোলা-সহ একাধিক নতুন প্রাণী প্রজাতিরও আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। ভ্রানস্কি সে-সময় দাবি করেন,তাঁর আবিষ্কৃত এই নতুন উদ্ভিদটি স্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম। অবশ্য তাঁর এই দাবিকে সে-সময় সাদরে গ্রহণ করেনি বিজ্ঞানীমহল।
১৯৮০-র দশকে ইকুয়েডরের এই আমাজনিয়ান অরণ্যে পুনরায় একটি অভিযান চালান জীববিজ্ঞানী জন এইচ বোদলে। তিনিই দীর্ঘদিন এই অরণ্যে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণ করেন এই বিশেষ গাছের গতিবিধি এবং তাদের জীবনপদ্ধতি। বোদলের নেপথ্যেই সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে গৃহীত হয় চলমান উদ্ভিদের অস্তিত্বের কথা। কিন্তু কীভাবে অবস্থান পরিবর্তন করে এই উদ্ভিদ?
সাধারণভাবে ১৮-২০ মিটার বা ৬০-৭০ ফুট লম্বা হতে পারে এই উদ্ভিদ। অবশ্য ইকুয়েডরের এই উদ্ভিদ প্রজাতির বাহ্যিক গঠন অনেকটা বাংলার বুকে দেখা মেলে সুন্দরী জাতীয় ম্যানগ্রোভ গাছের মতো। আসলে সুন্দরী ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ হওয়ায় যেমন শ্বাসমূল দেখা যায় তাদের দেহে,তেমনই দেখা যায় ঠেসমূলের উপস্থিতিও। ‘ওয়াকিং পাম’-এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একইরকম।
ইকুয়েডরের এই বিশেষ অঞ্চলের মাটি আলগা হওয়ায় এবং সেখানে জলধারণ ক্ষমতা খুব কম। পাশাপাশি গহীন অরণ্যে সবচেয়ে সূর্যালোক প্রবেশ করতে না-পারায় অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতেই ‘ওয়াকিং পাম’-এর শিকড়ের দৈর্ঘ্য অন্যান্য গাছের থেকে বড়ো। আয়তন বা পরিধির দিক থেকেও তা যথেষ্ট মোটা। অনেকটা হাতির শুঁড়ের মতো। পাশাপাশি অত্যন্ত দ্রুত নতুন নতুন ঠেসমূল তৈরি করে সক্ষম ‘ওয়াকিং পাম’। একদিকে যেমন এই উদ্ভিদ নতুন উদ্ভিদ তৈরি করে, তেমনই পুরানো ঠেসমূল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় গাছের দেহ থেকে। অন্যদিকে গাছের মূল কাণ্ড ধীরে ধীরে সরে যায় তার মূল অবস্থান থেকে। এভাবেই প্রতিদিন অল্প অল্প করে স্থান পরিবর্তন করে এই গাছ।
পরিসংখ্যান ও গবেষণা বলছে প্রতিদিন দেড় থেকে দু সেন্টিমিটার সরণ হয় সেই গাছের। কখনও আবার দিনে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্তও অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম ওয়াকিং পাম। বছরের হিসাবে এই দূরত্ব কম নয় মোটেই। সাধারণত নিজের অবস্থান ২০ মিটার পর্যন্ত সরে যায় এই গাছ।
পরিসংখ্যান ও গবেষণা বলছে প্রতিদিন দেড় থেকে দু সেন্টিমিটার সরণ হয় সেই গাছের। কখনও আবার দিনে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্তও অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম ওয়াকিং পাম। বছরের হিসাবে এই দূরত্ব কম নয় মোটেই। সাধারণত নিজের অবস্থান ২০ মিটার পর্যন্ত সরে যায় এই গাছ।
তবে শুধু ওয়াকিং পামই নয়, সুমাকো বায়োস্ফিয়ারে রয়েছে বেশ কিছু আশ্চর্য গিরগিটি এবং ব্যাঙের প্রজাতিও। যা এই অরণ্য ছাড়া দেখতে পাওয়া যায় না বিশ্বের আর কোনো প্রান্তেই। আর সেই কারণেই একুশ শতকেরও শুরুতে ইকুয়েডরের এই সংরক্ষিত অরণ্যকে ‘হার্ট অফ দ্য ইউনেস্কো’ তকমা দেয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শাখা সংস্থা ইউনেস্কো। সবমিলিয়ে এই অরণ্য যেন আক্ষরিক অর্থেই জীববিজ্ঞানের এক আশ্চর্য জাদুঘর।
এই গাছের শিকড়গুলো পর্যাপ্ত মাটির অভাবে উপরে উঠে আসে এবং ছড়িয়ে যায়। এখান থেকেই আবার নতুন গাছ জন্মায়। আমাজনের আদিবাসীরা এই গাছকে জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহার করে থাকে। আবার গাছগুলো সরু এবং সোজা হওয়ায় তারা ঘরের কাঠামো তৈরিতেও ব্যবহার করে থাকে। এছাড়াও এ হাঁটা পাম গাছের হলুদ ফলও তারা খায়। আর শিকড়গুলো এফ্রোডিসিয়াক এবং হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
সূত্র : Live Science Journal
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
Development by: webnewsdesign.com