নিজস্ব প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনের রেডিওলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফার না থাকায় সেবাবঞ্চিত হচ্ছে জেলার লাখো মানুষ। সেই সঙ্গে বর্তমানে হাসপাতালে থাকা তিনটি মেশিন দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি এক্স-রে মেশিন অকেজো হয়ে গেছে।
শহরের সুধী সমাজ বলছে, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে প্রায় অর্ধকোটি টাকার সরকারের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, এ বিষয়ে চিকিৎসকের জন্য যোগাযোগ করা হলেও চিকিৎসক পাঠানোর উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ এ বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন জুনিয়র রেডিওলজিস্ট ডা. সালেহ আহমদ আলমগীর। তিনি ২০১৬ সালের ৩০ এপ্রিল অবসরে চলে যান। এরপর থেকে এক্স-রে মেশিনটি আর চালু করা হয়নি। পরে এ বিভাগে রেডিওগ্রাফার নিয়োগ হলেও অদৃশ্য কারণে সবাই বদলি হয়ে যান।
হাসপাতালে এখন তিনটি এক্স-রে মেশিন থাকলেও একটি অকেজো হয়ে গেছে। বর্তমানে একটি অ্যানালগ ও একটি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন রয়েছে। এ দুটি মেশিনও আছে অচল অবস্থায়।
সচেতন মহল বলছে, জেলার ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬৮ জন মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার একমাত্র আশ্রয়স্থল এ এক্স-রে মেশিনটি। কিন্তু এখানে চিকিৎসক ও রেডিওগ্রাফার না থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই মানুষগুলো। এ জন্য নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা নিলেও বেশি টাকা দিয়ে এক্স-রে করাতে হয় বাইরে। ফলে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা গুনতে হয় রোগীদের। কেন এত বছর ধরে এ বিষয়ে চিকিৎসক ও রেডিওগ্রাফার নেই, তা তদন্ত হওয়া জরুরি।
সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট খলিল রহমান বলেন, জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সর্বশেষ ভরসার জায়গা হলো সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে এত বছর ধরে কোনো এক্স-রে হচ্ছে না। মেশিনগুলো এত দিন না চালানোর ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি এখানে লোকবল না থাকার পেছনে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দায় রয়েছে।
হবিগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ন্যাথানায়েল এডুউইন ফেয়ারক্রস বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন থাকলেও প্রায় পাঁচ বছর ধরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক নেই। আসতে দেওয়াও হচ্ছে না। এর পেছনে বড় একটা সিন্ডিকেট রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, সুনামগঞ্জ থেকে কয়েক দিন আগে ২০ দিনের মাথায় একজন সিভিল সার্জনকে বদলি করা হয়েছিল। এগুলো এ সিন্ডিকেটের অংশ হতে পারে। তাদের ব্যবসার সুবিধার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক আসুক চায় না তারা। ছোট জেলা শহর হওয়ায় কেন্দ্রেরও এগুলো নজরে পড়ছে না। তাই সবাইকে এ বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।
তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো গাফলতি নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রতি মাসে সিভিল সার্জন কোন কোন বিভাগে চিকিৎসক নেই, সে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক না থাকার ফলে এক্স-রে মেশিন নষ্ট হচ্ছে, বিষয়টি এমপি-মন্ত্রীসহ সবাই জানেন। তবু কেন চিকিৎসক আসছেন না, সেটি মন্ত্রণালয় ভালো জানে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপপরিচালক) ড. আনিছুর রহমান বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। আশা করি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক খুব তাড়াতাড়ি পাব আমরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন শামস উদ্দিন বলেন, তিনটা কেন, পাঁচটা এক্স-রে মেশিন থাকলেও না চালালে নষ্ট হবে। তবে আমরা একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। ডিও লেটার দিয়েছি। বিষয়টি মন্ত্রী-এমপি সবাই জানেন।
Development by: webnewsdesign.com