হবিগঞ্জের নাঈমাকে খুঁজছে যুক্তরাজ্যের পুলিশ

সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১ | ৯:৫১ অপরাহ্ণ | 398

হবিগঞ্জের নাঈমাকে খুঁজছে যুক্তরাজ্যের পুলিশ

নিউজ ডেস্ক:: নাঈমা জান্নাত (৩৩)। ছিলেন অজপাড়াগাঁয়ের এক মেয়ে। ইউরোপ পাড়ি জমানোর লোভে বিয়ে করেছিলেন সহজ-সরল এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে। ৪ বছর সংসার করার নামে সেই প্রবাসীর জীবনকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে ৫ বছরের মাথায় চলে যান পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে। এতেও থেমে থাকেননি নাঈমা।

অভিযোগ ওঠেছে, ৩ কোটি টাকার সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে না পেরে ডিভোর্সের পরও নাঈমা প্রাক্তন স্বামীর কাছ থেকে টাকা-পয়সা বাগিয়ে নিতে করছেন নানা ফন্দি-ফিকির। নিজের থেকে ডিভোর্স নেয়ার পরও প্রায়ই দাবি করেন ‘ক্ষতিপূরণ’।

নাঈমা জান্নাতের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ তার প্রাক্তন স্বামী আব্দুস সাজাদের।

তবে প্রাক্তন স্বামী তার উপর মানহানি ও প্রতারণা মামলা করায় তিনি এখন যুক্তরাজ্যে আত্মগোপনে আছেন। তাকে খুঁজছে সে দেশের পুলিশ।

জানা গেছে, নাঈমার বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ এলাকার দিঘীরপাড় গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বদর উদ্দিন ও সুফিয়া বেগমের মেয়ে। ২০১২ সালের ৩০ জুলাই পারিবারিকভাবে নাঈমার বিয়ে হয় যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুস সাজাদের সঙ্গে। আব্দুস সাজাদের বাড়িও নবীগঞ্জে। নাঈমাকে বিয়ে করার পর ৭ মাস দেশে অবস্থান করেন সাজাদ। যুক্তরাজ্যে ফিরেই শুরু করেন প্রিয়তমা স্ত্রীকে কাছে (সে দেশে) নেয়ার প্রসেসিং। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নাঈমাকে নিয়ে যান যুক্তরাজ্যে।

সেখানে নাঈমাকে নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে করান বিভিন্ন লার্নিং কোর্স- শেখান ড্রাইভিং। স্ত্রীর প্রতি সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে পূরণ করেন তার সব চাহিদা। কিন্তু এমন সুখ সইছিলো না নাঈমার। স্বামী দিনভর কাজে থাকার সুযোগে জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। সে দেশে থাকা মৌলভীবাজারের ‘বাবজি’ নামের এক ছেলের সঙ্গে ২০১৭ সালে গড়ে তুলেন অবৈধ সম্পর্ক। স্বামীকে লুকিয়ে দিনভর চুটিয়ে প্রেম করতেন তিনি। এমনকি মাঝে-মধ্যে মামার বাসায় যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন হোটেলে প্রেমিকের সঙ্গে রাতও কাটাতেন নাঈমা।

আব্দুস সাজাদের অভিযোগ- নাঈমা এসব করতেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তার মামাতো ভাই-বোন এবং দেশে থাকা নিজের বোন ও দুলাভাইয়ের প্ররোচনায়।

অবশেষে ২০১৮ সালের এপ্রিলে স্বামীর প্রতি নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে সে দেশের নিম্ন আদালতে ডিভোর্স চান নাঈমা। নিম্ন আদালত নাঈমার পক্ষে রায় দিলে আব্দুস সাজাদ যান উচ্চ আদালতে। উচ্চ আদালত নাঈমার নির্যাতনের অভিযোগ খারিজ করে ২০২০ সালের মে মাসে তার ডিভোর্স আবেদন কার্যকর করেন। আদালত ডিভোর্সের রায় দেয়ার আগেই ২০১৮ সালে নাঈমা আব্দুস সাজাদকে ছেড়ে চলে যান পরকীয়া প্রেমিক ‘বাবজি’র কাছে।

পরবর্তীতে নাঈমার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে মানহানি ও প্রতারণা মামলা করেন সাজাদ। এরপর থেকে নাঈমা ও তার বর্তমান স্বামী সে দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন। পুলিশ তাদের খুঁজছে।

নাঈমার বিরুদ্ধে প্রাক্তন স্বামী আব্দুস সাজাদের হাজারো অভিযোগ। তিনি মুঠোফোনে বলেন ‘কোনো একজন নারীকে বিয়ে করে শুধু স্ত্রী হিসেবেই রাখে না, জীবনের অর্ধাঙ্গিনী করে। আমি নাঈমাকে গ্রামের এক সহজ-সরল মেয়ে বিবেচনা করে বিয়ে করে যুক্তরাজ্যে নিয়ে এসেছিলাম। একটি সুখময় দাম্পত্য জীবন চেয়েছিলাম। সবকিছু উজাড় করে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সে ওই ভালোবাসার মূল্য দেয়নি। আমার সঙ্গে প্রচণ্ড প্রতারণা করে জড়িয়ে পড়ে পরকীয়ায়। আমাকে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কথা বলে সে অনেকদিন হোটেলে রাত কাটিয়েছে প্রেমিকের সঙ্গে। পরকীয়ায় অন্ধ হয়ে আমার প্রতি নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে চলে যায় প্রেমিকের হাত ধরে। আমাকে এ দেশের আইনের চোখে গিল্টি বানিয়ে আমার সবকিছু নষ্ট করতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারেনি। আদালত আমাকে পর্যবেক্ষণ করে তার অভিযোগ মিথ্যা পেয়েছে। শুনেছি এখন সে টিকটক করে বেড়ায়। একজন মুসলিম মেয়ে হয়েও চলাফেরা করে ওয়েস্টার্ন কালচারে। দেশে ও যুক্তরাজ্যে অনলাইনে-অফলাইনে তার অনেক বয়ফ্রেন্ড। রাত-বিরেতে সে ঘুরে বেড়ায় এ দেশের ক্লাব ও বারে। বুঁদ হয়ে থাকে নেশায়।’

আব্দুস সাজাদ আরও বলেন, ‘ও আমার কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়েছিলো। কিন্তু সে যেহেতু নিজে থেকে ডিভোর্স চেয়েছিলো তাই আইনিভাবে সে ক্ষতিপূরণ পায়নি। মূলত সে ইউরোপে পাড়ি জমানো ও আমার সম্পত্তির লোভে আমাকে বিয়ে করেছিলো। সে কখনও আমাকে স্বামীর মর্যাদা দেয়নি। আমি তার পরিবারকে এই ৪ বছরে নানাভাবে প্রায় ২৫ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেছি। সে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক আমার কাছ থেকে ডিভোর্স নেয়নি। সুতরাং তার বর্তমান স্বামীর সঙ্গে থাকাটা অবৈধ।’

প্রবাসীদের সতর্ক করে তাদের উদ্দেশ্যে আব্দুস সাজাদ বলেন, ‘আমি সকল প্রবাসীকে বলবো- তারা যাতে বিয়ে করার আগে মেয়ের চারিত্রিক ব্যাকগ্রাইন্ড, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড এবং বংশ মর্যাদা ভালো করে যাচাই করে বিয়ে করেন। আমার মতো ভুল যাতে কেউ না করেন এবং আর্থিক ও সামাজিক-পারিবারিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন না হন। নাঈমা আমার ৪৫ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছে।’

আব্দুস সাজাদের এসব অভিযোগের বিষয়ে নাঈমা জান্নাতের ভাই মাসুম আলম বলেন, ‘সব মিথ্যা। ডিভোর্সের পরে তাঁর (আব্দুস সাজাদের) আর কোনো অভিযোগ কেন থাকবে’?

সাজাদের আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে মাসুম বলেন, ‘এসব মিথ্যা অভিযোগ।’ কেন ডিভোর্স হলো এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের নিজেদের বিষয়। আমরা কিছু জানি না।’

স্বামীর ঘরে থাকা অবস্থায়ও বোনের অন্য ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক এবং ইসলামি তালাক না দিয়ে তাকে বিয়ে করার বিষয়ে মাসুম কিছু জানেন না বলে জানান।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com