সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে লাঙল দিয়ে হাল চাষ

সোমবার, ০৩ মে ২০২১ | ৯:৫৬ অপরাহ্ণ | 729

সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে লাঙল দিয়ে হাল চাষ

ডেস্ক রিপোর্ট:: সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে জমিতে লাঙল দিয়ে হাল চাষ। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে। তাই তো কৃষি ছোঁয়ায় দেখা যায় বেশ পরিবর্তন। তাই আর সকালে কাঁধে লাঙল-জোয়াল আর জোড়া গরুর দড়ি হাতে নিয়ে মাঠে যেতে আর দেখা যায় না কৃষকদের। ফলে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য লাঙল দিয়ে হাল চাষ।

লাঙল, জোয়াল কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে হাল চাষের পরিবর্তনে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করা হয়। এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষক গরু পালন করত হাল চাষ করার জন্য। আবার কিছু মানুষ গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে ছিলেন। আবার অনেকে তিল, সরিষা, কলাই, আলু চাষের জন্য ব্যবহার করতেন।

নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করত। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেত তাদের পরিবারের সচ্ছলতা। আগে দেখা যেত কাকডাকা ভোরে কৃষক গরু, লাঙল, জোয়াল নিয়ে মাঠে বেড়িয়ে পড়ত। এখন আর চোখে পড়ে না গরুর লাঙল দিয়ে চাষাবাদ। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চালাচ্ছে জমি চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদলি করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে গরু, লাঙল, জোয়াল দিয়ে জমিতে হাল চাষ।

রাজশাহী শহর থেকে উত্তরে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দূরে নওগাঁর মান্দার তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন। সেখান থেকে মান্দা সদরে যাওয়ার পথে এমনই একটি দৃশ্য চোখে পড়ে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সরদার পাড়া গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন রাজশাহী পোস্টকে বলেন, ছোট বেলায় হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু ছিল ২-৩ জোড়া থাকত। চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া বলদ, কাঠ লোহার তৈরি লাঙল, জোয়াল, মই, লরি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোনা ইত্যাদি।

বাবুল হোসেন বলেন, আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো। অনেক সময় গরুর গোবর জমিতে পড়ত, এতে করে জমিতে অনেক জৈবসার হতো। ক্ষেতে ফলন ভালো হতো। এখন নতুন নতুন মেশিন এসেছে সেই মেশিন দিয়ে এখানকার লোকজন জমি চাষাবাদ করে।

তিনি আরও বলেন, জমি ভেদে বিঘা প্রতি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা হাল চাষ করে নিই। তবে অনেকে মেশিন দিয়ে জমি চাষ করার ফলে এখন আর আগের মতো কেউ জমিতে হাল চাষ করে নেয় না। যেসব জমিতে পাওয়ার টিলার যেতে সমস্যা সেসব জমিতে শুধু হাল চাষ করে। আমাদের টাকা নেই মেশিন কিনে জমি চাষ করার, তাই এখনো গরু, লাঙল, জোয়াল নিয়ে জমিতে হাল চাষ করি এবং এখনো সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

একই উপজেলার কৃষক রহিম উদ্দিন, দিয়ানূচ আলী, আতাবুল ও জয়নাল হোসেনসহ আরও কৃষকরা জানান, গরুর লাঙল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪৪ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙলের চাষ গভীর হয়। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার, কীটনাশক সাশ্রয় পায়।

মান্দা উপজেলার কৃষি অফিসার মোছা: শায়লা শারমিন রাজশাহী পোস্টকে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ভিড়ে এবং সময়ের ব্যবধানে লাঙল দিয়ে হাল চাষ এখন নেই বললেই চলে। যেহেতু অল্প খরচে কম সময়ের ব্যবধানে ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করতে পারছে। সেহতেু কৃষকরা যান্ত্রিক প্রযুক্তিকর মাধমে জামি চাষে বেশি ঝুঁকছেন। কিছু জমি চাষের ক্ষেত্রে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষের পর গরু দিয়ে মই দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে গরু দিয়ে জমিতে মই দেওয়া দেখা যায়।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com