ঘুমন্ত স্ত্রীকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দিলেন স্বামী!

রবিবার, ০৪ জুলাই ২০২১ | ১০:৫৬ অপরাহ্ণ | 277

ঘুমন্ত স্ত্রীকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দিলেন স্বামী!

বড়লেখা প্রতিনিধি:: স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের নির্যাতন সইতে না পেরে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন গৃহবধূ রহিমা বেগম (২০)। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। অভিযোগ উঠেছে, বাবার বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় রহিমার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন তার স্বামী। এতে রহিমার হাত-মুখসহ শরীরের প্রায় ৬৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

রোববার (৪ জুলাই) ভোরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় পুলিশ রহিমার স্বামী অভিযুক্ত শিপন আহমদ ও শাশুড়ি আনূরী বেগমকে গ্রেফতার করেছে।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের রফিক উদ্দিনের মেয়ে রহিমা বেগমের সঙ্গে প্রায় তিন বছর আগে একই ইউনিয়নের আরেঙ্গাবাদ গ্রামের মুকুল মিয়ার ছেলে শিপন আহমদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রহিমার সঙ্গে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনের ঝগড়া হতো। এতে স্বামী ও তার স্বজনরা রহিমাকে নির্যাতন করতো। বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কয়েকবার সমাধান করে দিলেও কোনো লাভ হয়নি। এরপরও তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে থাকতো।

এদিকে স্বামী ও তার স্বজনদের নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সাতমাস আগে এক সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি হরিপুর গ্রামে চলে আসেন রহিমা। সন্তানকে দেখার সুযোগে প্রায় শ্বশুর বাড়িতে আসতেন রহিমার স্বামী শিপন আহমদ। গতকাল শনিবার (৩ জুলাই) শিপন সন্তানকে দেখতে শ্বশুর বাড়িতে আসেন। রাতে সেখানে ঘুমান তিনি। কিন্তু ভোর পাঁচটার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী রহিমা বেগমের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন শিপন। ঘটনার পরই তিনি পালিয়ে যান। রহিমার চিৎকার শুনে স্বজনরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে অভিযুক্ত শিপনকে গ্রেফতারে অভিযানে নামে পুলিশ। রোববার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার পশ্চিম হাতলিয়া এলাকা থেকে শিপনকে গ্রেফতারে করে পুলিশ।

দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাহেদুল ইসলাম সুমন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রহিমা বেগমকে তার স্বামী শিপন আহমদ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছেন। মেয়েটির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে সিলেট একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রহিমার স্বামী শিপন ও তার পরিবারের লোকজন প্রায়ই রহিমাকে নির্যাতন করতেন। বিষয়টি কয়েকবার বসে আমরা সমাধান করে দিয়েছি। এরপরও তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। নির্যাতন সইতে না পেরে প্রায় সাত মাস আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে চলে আসেন রহিমা। তাদের পরিবারে এক সন্তান রয়েছে। এই সুযোগে রহিমার স্বামী শিপন তাকে দেখতে আসতো। ঘটনার রাতেও শিপন শ্বশুর বাড়িতে এসে থেকেছে। ভোরবেলা সে স্ত্রী রহিমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. মো ফয়জুল ইসলাম রোববার বিকেল তিনটায় বলেন, সকাল সাতটার দিকে রহিমা বেগমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার হাত-মুখসহ শরীরের ৬৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার রোববার বিকেল তিনটায় বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পেট্রোল ঢেলে রহিমাকে তার স্বামী পুড়িয়েছে। ঘটনার পরই পুলিশ অভিযুক্ত শিপন ও তার মা আনূরী বেগমকে গ্রেফতার করেছে। রহিমার বাবা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com