কমলগঞ্জে কিশোরীর জন্য কাল হলো অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ লাইন

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই ২০২০ | ২:০৬ অপরাহ্ণ | 492

কমলগঞ্জে কিশোরীর জন্য কাল হলো অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ লাইন

কমলগঞ্জের শমশেরনগর ইউনিয়নের শিংরাউলী গ্রামে প্রভাব খাটিয়ে একটি ভবনের ছাদের ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করার অভিযোগ উঠেছে। আর ওই ভবনের ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এখন পাঞ্জা লড়ছে মুন্নী বেগম (১৬) নামের এক কিশোরী।

গত ২৬ জুন বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করে একটি ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিলে ৪ জুলাই দুপুরে ভবনের ছাদের ওপর দিয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে মুন্নী বেগম (১৬) গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন।

এ ঘটনার পরদিন ৫ জুলাই দুর্ঘটনা কবলিত দোতলা ভবনের মালিক আব্দুল করিম আবেদনকারী হিসেবে মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম বরাবরে আবেদন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। এর অনুলিপি প্রদান করা হয় চেয়ারম্যান বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুন মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক পরিচালক ও বোর্ড সভাপতি কামাল হোসেন নিজে দাড়িয়ে একটি ভবন ঘেষে নতুন খুঁটি পুতে সে খুঁটির ওপর একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার লাগিয়ে জনৈক মতিউল ইসলামের ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিলেন। সে সময় আবেদনকারী আব্দুর করিম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) মৌলভীবাজারের সাবেক পরিচালক ও বোর্ড সভাপতি কামাল হোসেন ও বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনকারী ঠিকাদারের কর্মীদের আপত্তি জানিয়েছিলেন। সে সময় পবিস এর সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন বলেছিলেন নিরাপত্তার জন্য এ ভবন এলাকার বৈদ্যুতিক তার ঝুঁকিমুক্ত রাখতে প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে আচ্ছাদিত করা হবে। কিন্তু প্রতারণা করে তার ভবনের ছাদের ওপর দিয়ে চলে যাওয়া বৈদ্যুতিক তার আর প্লাস্টিক পাইপ দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়নি।

এ অবস্থায় গত ৪ জুলাই ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ভবনের ভাড়াটে মুন্নী বেগম চলমান বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে গুরুতরভাবে আহত হন।

তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হয়ে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই হাত ও পেট মারাত্বকভাবে পুড়ে বড় ধরণের ক্ষতের সৃষ্টি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ভবন মালিক ও আবেদনকারী আব্দুল করিম আরও বলেন, ঘটনার পরদিন ৫ জুলাই পবিস কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম-এর কাছে আবেদন করলেও দীর্ঘ ১৮ দিনেও পবিস থেকে কোন তদন্ত করা হয়নি। এদিকে আহত মুন্নী বেগমের অবস্থা এতই খারাপ যে সে এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

আহত কিশোররীর পিতা মোবারক হোসেন বলেন- আশ্চর্যের বিষয় যে, এমনিতেই অনিয়ম করে ভবনের ছাদের ওপর দিয়ে বৈদ্যুতিক তার নেওয়া হয়েছে। তার পর এতবড় দুর্ঘটনা হলো এবং দুর্ঘটনার পরদিনই পবিস কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে আবেদন করলেও পবিস থেকে কোন তদন্ত হয়নি। এখন তার মেয়ের অবস্থা এতই খারাপ যে সে যে কোন সময়ে মারা যেতে পারে। তিনি সুষ্ঠু তদন্তক্রমে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহন করতে পবিস ও প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

ঘটনা ও অভিযোগ সম্পর্কে জানার জন্য পবিসের সাবেক পরিচালক ও বোর্ড সভাপতি কামাল হোসেনের মুঠোফোনে (০১৭১১ ০৪২২৩২) নম্বরে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার আব্দুল মালিক মুঠোফোনে বলেন, এ ধরণের ঘটনার কথা তিনি জানেন না। তবে কাজের স্থানে দায়িত্বপ্রাপ্ত তার ফোরম্যান বলতে পারবেন বলে জানান। ঠিকাদারের ফোরম্যান ভলু মিয়া মুঠোফোনে বলেন, পবিসের সাবেক পরিচালক ও বোর্ড সভাপতি কামাল হোসেনের উপস্থিতিতেই আব্দুর করিমের ভবনের কাছে খুঁটি পুতে সেখানে বৈদ্যুতিক তার স্থাপন করা হয়। সেখানে কোন আপত্তি থাকলে কামাল হোসেন তাদেরকে (ঠিকাদারের লোকদের) কিছুই জানাননি।

পবিস কমলগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম গণেশ চন্দ্র দাশ এ ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কাজে বেশী ব্যস্ততার কারণে তদন্ত করা হয়নি। এখন গুরুত্বসহকারে এ অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com