নিউজ ডেস্ক:: বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে সিলেটে এবার ‘অন্যরকম’ দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। উৎসবহীন এমন পূজায় খুব একটা মন ভালো নেই সনাতন ধর্মালম্বীদের।
মণ্ডপে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের জন্য খোলামেলা রাখা, শুধু পুষ্পাঞ্জলি দানের সময় মাইকের ব্যবহার করা, সাউন্ড সিস্টেম বা ডিজের ব্যবহার না করা- এবার বাধ্যতামূলক ছিলো। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে প্রসাদ বিতরণ, আরতি প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করা হচ্ছে না এবার। মণ্ডপের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক স্প্রে করা অথবা সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা ছিল। পূজার্থী ও দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। মণ্ডপ গেটে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ভিড় এড়াতে অল্পসংখ্যক পূজার্থীকে দফায় দফায় পুষ্পাঞ্জলি দান অথবা ভার্চুয়াল পুষ্পাঞ্জলি দানের ব্যবস্থা রাখা। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মণ্ডপে প্রবেশ এবং প্রস্থানের আলাদা ব্যবস্থা রাখা। আতশবাজি বা পটকা পরিহার করা, সন্ধ্যার পর দল বেঁধে মণ্ডপে না যাওয়া- কভিড-১৯-এর কারণে এমন বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে এবারের পূজায়।
করোনা পরিস্থিতিতে নিজে সুস্থ থাকা এবং অপরকে নিরাপদ রাখার প্রত্যয়ে সিলেটে এবারের দুর্গাপূজা পালন করা হচ্ছে একেবারে সংক্ষিপ্ত পরিসরে।
সনাতন ধর্মালম্বীদের অনেকেই বলছেন- এমন বাধ্যবাধকতা থাকায় অনেকটা প্রাণহীন এবারের পূজার প্রতিটি দিন। এ কারণে সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেলের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিটি মণ্ডপ দর্শনার্থীদের ভিড়ে সরগরম থাকলেও এবারের পূজায় ছিলো না সেই দৃশ্য।
বাধ্যবাধকতা ও মণ্ডপে পুলিশ মোতায়েন না থাকায় অধিকাংশ সনাতনী ভক্ত বের হয়নি বাসা থেকে। করোনার প্রাণহীন এমন পূজায় মন খারাপ বেশিরভাগ দর্শনার্থীর।
এমন অবস্থায় সিলেটে আজ সোমবার (২৬ অক্টোবর) বিজয়া দশমীর মাধ্যমে শেষ হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব। বিজয়া দশমীতেও রাখা হয়েছে বাধ্যবাধকতা। সূর্যাস্তের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে প্রতিমা বিসর্জন।
গতকাল রোববার ছিল মহানবমী। নবমী পূজা শেষে যজ্ঞাদি অনুষ্ঠিত হয়। যজ্ঞ নবমী পূজার মধ্য দিয়ে ভক্তরা দুর্গতিনাশিনী, মহিষাসুর মর্দিনীর আরাধনা করেন। মহানবমীর রাতে নগরীর পূজামন্ডপগুলোতে ভক্ত, পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের কিছু টা ভিড় ছিলো। তবে করোনা পরিস্থিতিতে
অন্যান্যবারের মতো ততটা ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি।
নগরীর দাড়িয়াপাড়ার চৈতালী সংঘ, দাড়িয়াপাড়ার ঝুমকা সংঘ, শ্রী শ্রী রক্ষাকালি বাড়ি, সনাতন যুব ফোরাম, মির্জাজাঙ্গালের দত্ত কুঠির, জল্লারপাড়ের সত্যম শিবম সুন্দরম, লামাবাজারের তিন মন্দির, মাছুদিঘিরপাড়ের ত্রিনয়নী, মাছিমপুর মণিপুরীপাড়ার শ্রীশ্রী গোপীনাথ জিউর মন্দির ও মাছিমপুর কুরি পাড়া, চালিবন্দর, কাস্টঘর, যতরপুর, তোপখানা, শেখঘাট, রায়নগর, ঝেরঝেরিপাড়া, শিবগঞ্জ, গোপালটিলা, বালুচর, দুর্গাবাড়ি, আম্বরখানা, করেরপাড়া, আখালিয়া কালিবাড়ি, গোটাটিকর, জৈনপুর ও শিববাড়ি পূজামণ্ডপে মানুষের ভিড় কিছু দেখা যায় ।
এদিে, নগরীর চাঁদনীঘাটে আজ সোমবার বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রতিমা বিসর্জন করা হবে। পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সুবোধ মঞ্চ থেকে প্রতিমা বিসর্জন নিয়ন্ত্রণ করা হব।
এ বিষয়ে মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত জানান, প্রতিমা বিসর্জন উদ্বোধন করবেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রা বর্জন, বিসর্জনকালে শিশু-মহিলা ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা (বয়স্ক ব্যক্তিদের) সাথে না রাখা, প্রতিমা বহনকালে রাস্তায় মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম না বাজানোর জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
Development by: webnewsdesign.com