এক ইউনিয়নে একটিও পাকা রাস্তা নেই

রবিবার, ০২ মে ২০২১ | ৮:৫৮ অপরাহ্ণ | 234

এক ইউনিয়নে একটিও পাকা রাস্তা নেই

নিউজ ডেস্ক:: নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় দক্ষিণাঞ্চলের শেষ জেলা সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদ শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে। ইউনিয়নের আয়তন ৩৩ বর্গ কিলোমিটার। ইউনিয়নের কোথাও নেই পাকা সড়ক। দু’একটি সোলিং সড়ক ছিল। সেগুলোর ইট উঠে গেছে। সেতু-কালভার্ট নেই। ইউনিয়নের ১৫ গ্রামে যাতায়াতে রয়েছে মাটির রাস্তা।

ইউনিয়নের লোকজন জানান, বৃষ্টি হলে কাদামাটি দিয়ে চলাচল করতে হয়। জুতা পরে রাস্তায় চলা যায় না। উন্নয়নের কথা শুনলেও চোখে দেখি না। আমাদের রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি।

শ্যামনগর উপজেলার নীলডুমুর খেয়াঘাট পার হয়ে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ ইউনিয়ন এটি। বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রথমে আঘাত হানে ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। ২০০৯ সালে আইলা থেকে শুরু করে সবশেষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্পানও এখানে আঘাত হানে। এখানের বাসিন্দাদের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই।

dhakapost
শ্যামনগর উপজেলার নীলডুমুর খেয়াঘাট পার হয়ে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হয়

ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডুমুরিয়া গ্রামের আবেয়ার রহমানের ছেলে ভ্যানচালক বিল্লাল হোসেন বলেন, বেড়িবাঁধের ওপর আমাদের মাটির রাস্তা। এই রাস্তাই প্রধান সড়ক। কোথাও ইটের সোলিং আছে, কোথাও নেই। ইউনিয়নের ১৫ গ্রামে যাতায়াতের প্রধান যান ভ্যানগাড়ি আর মোটরসাইকেল। তবে ভ্যানগাড়ি সবখানে চলে না। মোটরসাইকেল ছোট রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। ভ্যান চালানোর জায়গা নেই। ইউনিয়ন ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে হলে নৌকায় নদী পার হয়ে যেতে হয়। কষ্টের সঙ্গেই বসবাস আমাদের।

ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সোরা গ্রামের বাসিন্দা ৭০ বছরের বৃদ্ধ আজিবর গাজী বলেন, আমাদের মতো অবহেলিত ইউনিয়ন দেশের কোথাও নেই। রাস্তাঘাট নেই, বাঁধের ওপর দিয়ে চলতে হয়। বৃষ্টি হলে চলাচলের উপায় থাকে না। দুঃখের শেষ নেই।

ইউনিয়নের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের যাতায়াতের জন্য সোরা গ্রামের শেখবাড়ি জামে মসজিদের পাশে খালের ওপর একটি কালভার্ট রয়েছে। খসে পড়ছে পলেস্তারা। কত বছর আগে  কালভার্টটি নির্মাণ করা হয়েছিল জানাতে পারেনি স্থানীয়রা। এটি অনেক পুরাতন।

dhakapost
ইউনিয়নের ১৫ গ্রামে যাতায়াতের প্রধান যান ভ্যানগাড়ি আর মোটরসাইকেল

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০০৯ সালে আইলার পর কালভার্টটি ভেঙে যায়। ধীরে ধীরে পলেস্তারা খসে পড়ে। এখন নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে কালভার্টটি। দুই ওয়ার্ডের ৮-১০ হাজার মানুষ চলাচল করে। বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটে। জনপ্রতিনিধিদের খেয়াল নেই।

ইউনিয়নের চাঁদনিমুখা গ্রামের খায়রুল ইসলাম বলেন, একটি এলাকার উন্নয়নের প্রধান শর্ত- ওই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। আমরা ইউনিয়নবাসী সেটি থেকে বঞ্চিত। এজন্য সামগ্রিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত আমরা। ২০০৯ সালে আইলার আগে কিছু পাকা রাস্তা থাকলেও আইলায় ধসে গেছে। তারপর থেকেই ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। আমাদের দিকে দৃষ্টি নেই কারও।

চাঁদনিমুখা গ্রামের ব্যবসায়ী খালিদ হাসান বলেন, নদীপথে শহর-উপশহর থেকে মালামাল এনে বিক্রি করতে হয়। সময় লাগে বেশি। টাকাও বেশি। বিকল্প পথ নেই। তবে জনপদের ভেতরে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো যদি ভালো হতো; মানুষের দুঃখ-কষ্ট কমে যেত।

dhakapost
চাঁদনিমুখা গ্রামের সড়ক

সোরা গ্রামের বাসিন্দা অয়েজকুরুনি বলেন, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। আমরা কেন অবহেলিত? সাতক্ষীরা জেলাকে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষায় কাজ করে গাবুরা জনপদ। যেকোনো দুর্যোগ এখানে আঘাত হেনে শক্তি হারায়। অথচ আমরা সবাই উন্নয়নবঞ্চিত। ইউনিয়নটি রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ নেই। মানুষগুলো কত কষ্টে আছে সেটা যারা আসেননি, তারা জানেন না। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি, আমাদের এলাকার দিকে নজর দিন।

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, এলাকায় রাস্তাঘাট নেই। তবে একসময় ছিল। হরিশখালি-পার্শ্বেমারী, চাঁদনিমুখা-চৌদ্দরশিতে ইটের রাস্তা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, বুলবুল ও আম্পানে গোটা ইউনিয়ন ডুবে যাওয়ায় রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এখন চলাচলের রাস্তা নেই। ইউনিয়নের কোথাও পাকা সড়ক নেই। রাস্তাঘাট ভালো রাখতে হলে আগে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।

dhakapost
সোরা গ্রামের শেখবাড়ি জামে মসজিদের পাশে খালের ওপর ভাঙাচোরা কালভার্ট

তিনি বলেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। সেটি আমাদের নেই। বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে গাবুরাকে যোগাযোগ ব্যবস্থার আওতায় আনার দাবি জানাই।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা মূলত উপজেলা থেকে উপজেলা সড়ক সংস্কার ও নির্মাণের কাজ করি। ইউনিয়নের সড়কগুলো সংস্কার বা উন্নয়নকাজ করে এলজিইডি বিভাগ। তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের (এলজিইডি) সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ইউনিয়নটিতে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। নদী পার হয়ে যেতে হয়। উন্নয়নকাজের যন্ত্রপাতি ও ভারী যন্ত্রাংশ নদীপথে সেখানে নেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য ওই এলাকার রাস্তাঘাটের তেমন উন্নয়ন করতে পারি না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এমপি যোগাযোগের চেষ্টা করেন না। ফলে ওখানের মানুষ উন্নয়নবঞ্চিত।

সৌজন্যে: ঢাকাপোস্ট

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com