অবশেষে মজুরিসহ বকেয়া পাওনা আদায় করে নিলেন কালিটি চা শ্রমিকরা

সোমবার, ১১ মে ২০২০ | ১০:১০ অপরাহ্ণ | 483

অবশেষে মজুরিসহ বকেয়া পাওনা আদায় করে নিলেন কালিটি চা শ্রমিকরা

অবশেষে তুমুল আন্দোলনের মুখে কালিটি চা বাগানের চা শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা আদায় করে নিলো। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা-বাগানের ৫৩৭ জন শ্রমিক ১৩ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পেয়েছেন গতকাল রোববার। আজ সোমবার (১১ মে) বোনাসসহ অন্যান্য বকেয়া পাওনা পাচ্ছেন চা শ্রমিকরা।

বকেয়া মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে বাগানের শ্রমিকেরা কয়েক দফায় ভূখা বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রাসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছিলেন। পরে এমন পরিস্থিতিতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন বিষয়টি সমাধানের কার্যত উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বকেয়া মজুরি না পাওয়ায় অনাহারে-অর্ধাহারে থেকে একের পর এক আন্দোলন ও বিক্ষোভ করে আসছিলো বাগানে শ্রমিকরা। অবশেষে ১৩ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পাওয়ায় শ্রমিকরা অনেক খুশি হয়েছেন বলে জানা গেছে। এই খুশিকে তারা তাদের আন্দোলনের বিজয় হিসেবে দেখছেন।

উপজেলা প্রশাসন ও বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কালিটি বাগানের ইজারাদার প্রতিষ্ঠান সিলেটের ‘জোবেদা টি কম্পানি’। বাগানের ৫৩৭ জন শ্রমিক কাজ করেও ১৩ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাচ্ছিলেন না। মজুরির দাবিতে তারা বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছিলেন। গত ১৫ এপ্রিল বকেয়া মজুরির দাবিতে বাগানে ভূখা বিক্ষোভ মিছিল করে। এ নিয়ে প্রথম আলো, সিলেট টুডেসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি বাংলাদেশ টি বোর্ডের দৃষ্টিগোচর হলে সচিব স্বাক্ষরিত বাগানের মালিক বরাবরে সাত কর্মদিবসের ভিতর দ্রুত সমাধানের জন্য একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। যার অনুলিপি প্রশাসনসহ চা বাগান সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। এরপর ১৯ এপ্রিল বাগানের শ্রমিকরা আবারো বকেয়া মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দাবিতে সাড়ে সাত কিলোমিটার লং মার্চ করে ভূখা বিক্ষোভ মিছিল করে কুলাউড়া শহরে এসে এক ঘণ্টা প্রধান সড়ক অবরোধ করে। তাদের আন্দোলনের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসে।

চা-শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির দাবিতে ১৫১ জন নাগরিক বিবৃতি দেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। কিন্তু তাদের এত আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির পরও বাগানের মালিকপক্ষ সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যত উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর মাধ্যমে বাগানের সৃষ্ট সমস্যার খবর জানতে পেরে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টির সমাধানের জন্য ২২ এপ্রিল উপজেলা ইউএনও’র কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিনের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে মালিকপক্ষ প্রথমে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে মজুরি পরিশোধের কথা দেয়। কিন্তু তা পরিশোধ করা হয়নি। পরে আরো কয়েক দফা সময় নেন তারা। এরপর ফের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে ১০ মে রবিবার বিকেল তিনটার দিকে বাগানের ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সামনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকদের দাঁড় করিয়ে মজুরি প্রদান করা হয়। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তা চলে। গতকাল মোট ১ কোটি ৬ লক্ষ ৭৪ হাজার ৮৯৭ টাকার মধ্যে ১৩ সপ্তাহের মজুরি বাবত ৪৯ লক্ষ ৪৪ হাজার ৩৩৭ টাকা প্রদান করা হয়। বাকি বকেয়া টাকা আজ প্রদান করা হচ্ছে।

গতকাল বকেয়া মজুরি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওছার দস্তগীর, কুলাউড়া থানার ওসি মো. ইয়ারদৌস হাসান, জোবেদা টি কম্পানির চেয়ারম্যান আবদুল খালিক, বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দেব, স্থানীয় কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ রহমান আতিক, কালিটি বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শম্ভু দাস, সম্পাদক উত্তম কালোয়ার প্রমুখ। চা-শ্রমিক অনিমা অলমিক বলেন, ‘বকেয়া মজুরি আমাদের আন্দোলনের ফসল, ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কেটেছে। বাস্তবায়ন করতে হবে। চা-বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক উত্তম কালোয়ার জানান, সব শ্রমিক ১৩ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি পেয়েছেন। এখন নগদ মজুরি পেয়ে শ্রমিকরা খুবই খুশি। এরজন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও সহযোদ্ধাদের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ। এতোদিন আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তিনি আরও জানান, সব দাবি বাস্তবায়নের সম্মতিক্রমে আমাদের ১৩ দফা দাবির ছয়টির বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি সাত দফা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে।

চা-বাগানের ব্যবস্থাপক প্রণব কান্তি দেব বলেন, ‘শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া শুরু হয়েছে। কালিটি চা-বাগানের ৫৩৭ জন চা-শ্রমিকের নগদ মজুরি ও বকেয়া বোনাস দেওয়া শুরু হয়েছে। তারা ১৩ সপ্তাহের বকেয়া মজুরিসহ অন্যান্য ভাতাদি পাচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশেষ করে জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন স্যারের বিশেষ উদ্যোগে কয়েক দফায় বৈঠক করে সমাধানের পথ বের করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ বিভাগের সহযোগিতায়ও ছিল। তিনি আরো বলেন, ১৩ সপ্তাহের মজুরিসহ ২০১৫ সাল থেকে বকেয়া বিভিন্ন ভাতাসহ ‘নগদ প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ৮৯৭ টা চা-শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ২০০ শ্রমিককে এককালীন ৫ হাজার টাকা করেও দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরীন সোমবার বলেন, প্রশাসন সবসময় কালিটি চা বাগানের শ্রমিকদের পাশে ছিল, এখনো আছে। বাগানের সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকের পর বাগানের মালিকপক্ষকে কঠোর চাপপ্রয়োগ করায় একটা সন্তোষজনক সমাধান হয়। ইতিমধ্যে শ্রমিকদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক দফায় ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। আগামীতেও সবসময় জেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com