১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম সাহিত্য সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চাই। … প্রতিটি মানুষকে শিক্ষিত করতে না পারলে সোনার মানুষ গড়া যাবে না।’ বঙ্গবন্ধুর বহুল প্রচারিত বাণী/উক্তিগুলোর মধ্যে এটি একটি। সবাই এটি পড়েছেন/শুনেছেন। তবে বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবে হারানোর মাস আগস্টে এসে এই বাণীর গভীরতাটি নতুন করে তুলে ধরার মাধ্যমে তাকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে চাই। এতে করে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনার ঐতিহাসিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং স্বাধীনতা-উত্তরকালে তার শিক্ষা ভাবনার প্রাসঙ্গিকতাও নতুন করে অনুধাবনের সুযোগ তৈরি হবে। স্বভাবতই বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনার প্রসঙ্গের এই আলোচনায় মুখ্য জায়গায় থাকবে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে প্রস্তুতকৃত বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ১৯৭৪, যা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট নামেও পরিচিত (কারণ বঙ্গবন্ধু এই কমিশন রিপোর্ট প্রস্তুত করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেকালের প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. কুদরত-ই-খুদাকে)।
শিক্ষা আর জীবন যে আলাদা আলাদা কোনো সত্তা নয় সে কথাটি আমরা রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকে জেনেছি। কিন্তু সেই কথাটিকে অন্তরে ধারণ করে বাঙালির সার্বিক মুক্তির জন্য বাস্তবেও যে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নীতিকাঠামোতে ব্যবহার করা যায় সে উদাহরণ বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছেন। শিক্ষাকে বঙ্গবন্ধু একেবারে গোড়া থেকেই সুনির্দিষ্টভাবে পূর্ব বাংলার মানুষের এবং সাধারণভাবে সারা বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির অন্যতম প্রধান শর্ত হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সেই ১৯৪৮ সালে (অর্থাৎ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই) পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের রিপোর্টে দেখা যায় যে, শিক্ষা ও ?উন্নয়নের যোগসূত্র স্থাপন করে তরুণ শেখ মুজিব খুলনার দৌলতপুরে যে বক্তৃতা করেছেন তাতে এই বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ১ ডিসেম্বর ১৯৪৮-এর ওই বক্তৃতায় শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘শিক্ষাদীক্ষাই হইল মানব সভ্যতার মাপকাঠি- অথচ আমাদের দেশের অগণিত জনসাধারণকে অশিক্ষার অন্ধকারে ডুবাইয়া রাখিয়া কোন মুখে আমরা বিশ্বের দরবারে নিজদিগকে সভ্য জাতি বলিয়া গৌরব করিব? আজ দেখিতে পাইতেছেন যে আমাদের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস হইতে বসিয়াছে, শিক্ষকদের বেতন না বাড়াইলে শিক্ষা সমস্যার সমাধান অসম্ভব।’ প্রাক-স্বাধীনতা পর্বে সব সময়ই বঙ্গবন্ধু এভাবে গণমানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নের জন্য শিক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে গেছেন। ১৯৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনের আগেও বাঙালি স্বায়ত্তশাসনের দাবিই যখন মুখ্য রাজনৈতিক আলোচনার বিষয় তখনো বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকে বলতে শুনি- ‘সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চাইতে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর হতে পারে না।’ সেই সময়েই তিনি দাবি করেছিলেন যে মোট জিডিপির অন্তত চার ভাগ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করতে হবে।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশ পরিচালনার ভার কাঁধে নিয়ে তিনি তার এই দর্শনই প্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তাই ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের প্রাক্কালে শাসনতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য প্রশ্নে তিনি সহকর্মীদের শিক্ষকের গুরুত্ব ও শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে বলেছিলেন, ‘দেশের শিক্ষিত সমাজের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যাতে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হন সেই পরিবেশ সৃষ্টির সব রকম চেষ্টা করা হবে। … কাজ করার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিক্ষকের ন্যায্য মর্যাদা ও সম্মানও দিতে হবে।’ তাই সংবিধানে ‘গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা’, ‘নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান’, ‘সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করা’ এবং ‘নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ’-এর মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হতে দেখি। কেননা তিনি জানতেন একমাত্র সুশিক্ষাই মানুষের মনের জানালা খুলে দেয়। সুশিক্ষিত মানুষই মনুষ্যত্ববোধের গৌরব অর্জন করতে পারেন। আর সেই গৌরবের অধিকার সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার পক্ষে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শনে শিক্ষার যে গুরুত্ব তা প্রথমে সংবিধানে এভাবে প্রতিফলিত হতে দেখি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের প্রাথমিক পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন শেষে তিনি যখন মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন সেখানেও মোট উন্নয়ন ব্যয়ের ৭ শতাংশ ‘শিক্ষা ও মানবসম্পদ’-এ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। আর সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার যাতে নিশ্চিত করা যায় সে লক্ষ্যেই ড. কুদরত-ই-খুদাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ১৯৭৪ প্রস্তুত করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও উন্নয়ন দর্শনকে বহুলাংশেই এই কমিশন রিপোর্টে প্রতিফলিত করা হয়েছিল। যেমন- প্রথমত, এই প্রতিবেদনে শিক্ষাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ ও দক্ষ জনবল তৈরির পরিকল্পনা ছিল, ঠিক বঙ্গবন্ধু যেভাবে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শিক্ষা খাতে যুক্ত করতে চেয়েছিলেন। একইভাবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা, মূল্যায়ন/পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তনের মতো নতুন ও সময়োপযোগী নির্দেশনাও কমিশনের রিপোর্টে ছিল। বঙ্গবন্ধুও সংবিধানে সমকালীন সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থার কথা অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, কেবল পড়ালেখায় সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ বিষয়ে নির্দেশনা ছিল কমিশন রিপোর্টে। ফলে বলা যায়, বঙ্গবন্ধু যেমনটি চেয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই ‘ভবিষ্যতের গণমুখী শিক্ষার পথ-নির্দেশক দলিল’ হিসেবেই প্রস্তুত করা হয়েছিল বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ১৯৭৪। যদিও এই অসামান্য শিক্ষা কমিশনের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পর্যাপ্ত সময় তিনি পাননি, তবু সেই সব স্বপ্ন রয়ে গেছে শিক্ষা নিয়ে যারা ভাবেন তাদের অন্তরে অন্তরে।
কমিশনের প্রধান প্রস্তাবনাগুলো ছিল- ‘মানবিক, ধর্মনিরপেক্ষ, অন্যের প্রতি দায়বদ্ধ ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জনগোষ্ঠী তৈরি’, ‘নেতৃত্ব, চরিত্র, কায়িক শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি’, ‘সকল স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা’, ‘বিজ্ঞান, প্রযুক্তি শিক্ষা, গবেষণা ও নারী শিক্ষায় অগ্রাধিকার’ এবং ‘সমাজের সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার কাজ করতে উৎসাহিত করবে এমন উচ্চশিক্ষার বিকাশ’। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজের আকাক্সক্ষায় বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার মূল চেতনার সঙ্গে এই শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের অভিপ্রায়ের একটি চমৎকার সাজুয্য খুঁজে পাওয়া যায়। ঔপনিবেশিক শিক্ষার আগল ভেঙে প্রকৃতপক্ষে গণমুখী শিক্ষার দিকে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথনির্দেশক দলিল হিসেবেই এই রিপোর্টটিকে বিশ্লেষণ করতে হবে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ তার ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’-এ বলে গেছেন ‘আমাদের আদ্যোপান্ত সমস্তই প্রতিকূল, যাহা শিখি তাহা প্রতিকূল, যে উপায়ে শিখি তাহা প্রতিকূল, যে শেখায় সেও প্রতিকূল।’ ব্রিটিশ শাসনের শেষে যে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলো সেটিও ছিল এক ‘ভ্রান্ত-প্রত্যুষ’। কেননা এর ফলে পূর্ব বাংলা আরেক নয়া ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়েছিল। ফলে ওই বিভ্রান্তিকর ঔপনিবেশিক শিক্ষাই বহাল ছিল। ওই অপরিণামদর্শী শিক্ষা চর্চার যে ভুল সংস্কৃতি সদ্য স্বাধীন দেশে গেড়ে বসেছিল সেটি থেকে বেরিয়ে আসাটি ছিল অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকারের বিষয়। আগেই বলেছি যে এ জন্য দরকারি নীতি সহায়তা ও সম্পদ সরবরাহে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সম্পূর্ণ উদারহস্ত। একই সঙ্গে নতুন দেশের শিক্ষা নীতির মূল দর্শনটিও তিনি ওপর থেকে ঠিক করে দিতে সচেষ্ট ছিলেন। আর তার এহেন চেষ্টায় এ দেশের সচেতন-দায়িত্বশীল বুদ্ধিজীবী এবং আপামর জনগণের চাহিদা ও আকাক্সক্ষাগুলোও প্রতিফলিত হচ্ছিল। পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফেরার কয়েক মাসের মধ্যে (১৯৭২-এর ৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকে বলতে দেখি- ‘আমরা চাই গণমুখী শিক্ষা। আমরা আর ভবিষ্যতে আল্লাহর ওয়াস্তে কেরানি সাহেব পয়দা করার শিক্ষা চাই না।’ এই যে ‘গণমুখী শিক্ষা’ আর ‘কেরানি সাহেব পয়দা’ না করার প্রত্যয়- এগুলোকেই শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট ১৯৭৪-এর মূল জায়গা হিসেবে দেখতে পাই। গণমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে বঙ্গবন্ধু যে অতুলনীয় সফল যাত্রা শুরু করেছিল তা চার বছর পূর্ণ করার আগেই তাকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করে চক্রান্তকারীরা। চিন্তায়-চেতনায় বঙ্গবন্ধু দেশবাসীর মনে গভীরে থাকলেও তাকে সশরীরে হারানোর ফলে আমাদের আর্থসামাজিক আগ্রযাত্রায় যে ছেদ পড়েছিল তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল শিক্ষা কমিশনের এই মহতী রিপোর্ট বাস্তবায়নের পথেও। বলা চলে এরপর দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষার উদারনৈতিক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পাটাতনে বড় ধরনের আঘাত আসে। পেট্রোডলারের প্রভাবে মূলধারার শিক্ষার বদলে পশ্চাৎমুখী চিন্তা-চেতনার উদ্গাতা শিক্ষার দিকেই সেই সময়ের নীতিনির্ধারকদের বেশি বেশি মনোযোগ লক্ষ্য করা যায়। সেই আপদ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা খাত এখন পুরোপুরি মুক্ত সে দাবি করাটাও মনে হয় সঙ্গত হবে না। বরং শিক্ষা খাতে উদার মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্রটি আরো সঙ্কুচিত হতে দেখে মন বিষাদে ভরে যায়। তা সত্ত্বেও শিক্ষা কমিশনের ওই রিপোর্টটিতে যে প্রস্তাবনাগুলো ছিল সেগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকতা খানিকটা রক্ষা করেই পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছে। আর শিক্ষা নীতি বাস্তবায়নের অগ্রযাত্রায় গত ১৩-১৪ বছর সময়কালে আমাদের শিক্ষা খাতে আমাদের সংখ্যাতাত্ত্বিক অর্জন প্রশংসনীয়ই বলতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় নেট এনরোলমেন্ট ৯৮ শতাংশ, মাধ্যমিকে ৭০ শতাংশ এবং দুই স্তরেই নারী-পুরুষ ভর্তিতে সাম্য, কারগরিতে এনরোলমেন্ট স্বল্পতম সময়ের (৬ বছর) মধ্যেই ৬ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশ করা গেছে। প্রতিবন্ধীসহ সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আমাদের নেয়া প্রণোদনা উদ্যোগগুলোর সাফল্য তো সারা বিশ্বেরই স্বীকৃত। তবে আমার মতে ১৯৭৪-এর শিক্ষা কমিশনে যে পথনকশা দেয়া হয়েছিল তার সংখ্যাবাচক দিকগুলো অর্জনে আমরা যে সাফল্য দেখাতে পেরেছি, গুণবাচক দিকগুলো বাস্তবায়নে ততটা সফল হতে পারিনি। সবার জন্য শিক্ষায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার কাজটি আমরা ভালোভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছি। তবে শিক্ষার গুণমান এবং কর্মমুখিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের আরো অনেক কাজ যে বাকি- তা মানতেই হবে। ১৯৭৪-এর শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট এবং পরে তার ধারাবাহিকতায় প্রণীত জাতীয় শিক্ষা নীতিতে যে পথনকশা রয়েছে তা ধরে গুণমানের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। নতুন করে শিক্ষায় অর্থায়নের রূপরেখাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষা খাত পরিচালনার ক্ষেত্রেও নেতৃত্বের ধরন পাল্টানোর বেলাতেও বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথটি অনুসরণ করার প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
ইতোমধ্যে ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের জন্য শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সরকারের দুটি মন্ত্রণালয় ইউনেস্কোর সহায়তায় একটি মধ্যমেয়াদি সেক্টর প্ল্যান তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের যে দলটি সে কাজের জন্য নিয়োজিত হয়েছিল আমি তাতে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। ওই মধ্যমেয়াদি সেক্টর প্ল্যানেও আমরা গুণমানের শিক্ষা ও কর্মমুখী শিক্ষার দিকে জোর দিয়েছি। অবশ্য এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত দূর কী অগ্রগতি হয়েছে তা আমার জানা নেই। সরকারের তরফ থেকে নিশ্চয়ই সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও শিক্ষাকে যথাযথ অগ্রাধিকারই দেয়া হবে। কুদরত-ই-খুদা কমিশনের রিপোর্ট থেকে আগামী দিনের শিক্ষা নীতির জন্য যে দুটি বিষয় বিশেষভাবে গুরুত্বের দাবি রাখে সেগুলো হলো- চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী মানবসম্পদ তৈরিতে কর্মমুখী শিক্ষার বিস্তার, এবং সবার জন্য সহজে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পৌঁছাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার। পাশাপাশি মানবিকতা বিকাশের ওপর গুরুত্বও দরকার শিক্ষাবিষয়ক নীতিতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আবহে যে ধারার সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার মানুষ তৈরি করা জরুরি- সে দিকটায় যেন আমাদের শিক্ষা নীতির ধারক এবং বাহকরা সমান মনোযোগী হন সেই প্রত্যাশাই করছি। সচেষ্ট সমাজেরও এই ধারার শিক্ষা বিকাশে বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আশা করি, সমাজ ও রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনার কার্যকরী বাস্তবায়নে কাক্সিক্ষত মনোযোগ দেবে।
ড. আতিউর রহমান : বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।
dratiur@gmail.com
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
Development by: webnewsdesign.com