টুডে নিউজ ডেস্ক::
আবারও উগ্রবাদে জড়িয়ে কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ার ঘটনা ঘটছে তরুণদের মাঝে।সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে একসঙ্গে সাত তরুণ বাড়ি ছেড়েছে।এ ছাড়া বছরের শুরুতে সিলেট থেকেও কয়েকজন তরুণ হিজরতের কথা বলে ঘর ছাড়ে।কুমিল্লা থেকে নিখোঁজদের পথ অনুসরণ করে অন্য চার তরুণ ঘর ছাড়লে তাদের উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।বর্তমানে নিখোঁজ ১৬ জনকে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।তাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়াসহ ফিরিয়ে আনতে এবং এসব তরুণের মগজ ধোলাইকারীদের শনাক্ত করতে কাজ করছেন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা।
আইন সংশ্লিষ্ট ও অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন,উগ্রপন্থায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের নামে অজানার উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়ছে এসব তরুণ।দেশের ভেতরে আত্মগোপন হওয়া ছাড়াও ভারত,আফগানিস্তান ও সৌদি আরব বেশিরভাগের গন্তব্য।ধর্মের প্রতি দুর্বল তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন গোষ্ঠী হিজরত পরিভাষাটি ব্যবহার করে তাদের উগ্রবাদে সম্পৃক্ত করছে।২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত উগ্রবাদী সন্দেহে দুই শতাধিকের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের বিশেষায়িত অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক সমাজ ও অপরাধ গবেষক তৌহিদুল হক বলেন,ধর্মীয় গুরুত্ব থাকার কারণে হিজরত পরিভাষাটির অপব্যবহার করে তরুণদের একটি বড় অংশকে বিভ্রান্ত করে দলে ভিড়িয়েছে উগ্রবাদী সংগঠন গুলো।এ বিষয়ে পরিবারকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।সন্তান কোথায় যাচ্ছে,কার সঙ্গে মিশছে-সবকিছুর ভালোমতো খোঁজখবর রাখার কথা বলেন তিনি।
নিখোঁজদের পরিবার ও আইনসংশ্লিষ্ট বাহিনী সূত্রে জানা গেছে,মোরা মুসলিম চিরবীর। মরলে শহীদ,বাঁচলে গাজী।জিহাদ জিহাদ জিহাদ চাই,জিহাদ করে মরতে চাই-এমন কথা লিখে গত ২৩ আগস্ট কোচিংয়ের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয় কুমিল্লার কলেজ পড়ুয়া সাত শিক্ষার্থী।গতকাল পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।অন্যদিকে এসব তরুণের পথ অনুসরণ করে অন্য চার কিশোর ঘর ছাড়লে তাদের উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় ফেরত দিয়েছে র্যাব।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জানায়,কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী শাকির বিন ওয়ালীর প্ররোচনায় কথিত হিজরত করেছেন ওই সাত তরুণ। তারা হলো-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিল (১৭),একই কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোহাম্মদ আস সামি (১৮),কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম (১৮),একই কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিহাল আবদুল্লাহ (১৭),ভিক্টোরিয়া কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত (১৯),একই কলেজের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের আমিনুল ইসলাম আলামিন (২৩) ও ঢাকা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করা সরতাজ ইসলাম ওরফে নিলয় (২৫)।এই সাত শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় পাঁচটি এবং ঢাকায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।
নিখোঁজদের একজন মোহাম্মদ আস সামি (১৮)।ঘর ছাড়ার আগে বাবার উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে বলে,বাবা,স্বপ্ন পূরণে বেরিয়ে পড়লাম,খুঁজে লাভ নেই।শুধু দোয়া করবেন যেন স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হই।যেন আল্লাহ তায়ালা আমায় কবুল করেন।আপনাদের কবুল করেন।
নিখোঁজ ইমরান বিন রহমানের বাবা মজিবুর রহমান গণমাধ্যমে জানান,কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বের হয়ে রাতে বাসায় না ফেরায় বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজার চেষ্টা করি।না পেয়ে পরদিন কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি ও র্যাবকে জানানো হয়।
এদিকে গত মঙ্গলবার ঢাকার মগবাজার থেকে আববারুল হক (১৮) ও রামপুরার হাজিপাড়া থেকে ডা.শাকির বিন ওয়ালি (২৮) নামে দুজনকে গ্রেফতার করে।জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওইদিনই তাদের বিরুদ্ধে রামপুরা থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করেন কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান।
সিটিটিসি সূত্রে জানা যায়,ওই সাত তরুণের আরেক সহযোগী আবরারুল ইসলামকে আটকের পর জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য পায় সংস্থাটি।আবরারুল কুমিল্লা ইস্পাহানি স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।তার একটি মোবাইল ফোনে জঙ্গিদের দুটি অ্যাপ ব্যবহারের তথ্য পায়।জিহাদের ডাক পেয়ে তার বন্ধুরা কুমিল্লা থেকে ঘর ছেড়েছে বলে পুলিশকে জানায়।কুমিল্লা মেডিকেলে পড়েছেন বড় ভাই দুই চিকিৎসক তাদের প্রায় এক বছর ধরে প্ররোচিত করেছে।গ্রেফতার শাকির আবরারুলের গুরু হিসেবে পরিচিত। তবে ওই সাতজনের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, কুমিল্লা থেকে যারা নিখোঁজ হয়েছিল,তাদের ইমান,তাওহিদ ও জিহাদ সম্পর্কে দীক্ষা দেয় শাকিরসহ আরও একজন।তাদের ওপরে অন্য কেউ থাকতে পারে।বড় প্রস্তুতি নিয়ে তরুণদের ভুল পথে নিয়েছিল চক্রটি।মূলত তারা রিক্রুটকারী।সর্বশেষ নিখোঁজ সাত তরুণের খোঁজে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।
র্যাব জানায়,গত ২৩ আগস্ট কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে ঘর ছাড়া সাত শিক্ষার্থীর পথ অনুসরণ করে গত ১ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ে অন্য চার কিশোর।তাদের উদ্ধার করে পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিখোঁজ ওই সাত তরুণের পর কুমিল্লা থেকে আরও চার কিশোর বাসা থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল।পরে তাদের উদ্ধার করে ডি-রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হয়।তাদের কাছ থেকে সাতজন নিখোঁজের বিষয়ে খোঁজ পাওয়া যায়।তাদের হেফাজতে নিয়ে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বোঝানো হয়েছে।ওই কিশোররা বলেছে,তারা আর জঙ্গিবাদে জড়াবে না।অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।তবে তাদের ওপর নজর রাখা হবে।
এদিকে,চলতি বছরের শুরুতে সিলেট থেকে নিখোঁজ হওয়া ৯ তরুণের খোঁজ পাওয়া যায়নি।এর মধ্যে হাসান সাঈদ,ছাদিকুর রহমান,সাইফুল ইসলাম তুহিন,আব্দুর রাজ্জাক, শিব্বির আহমেদসহ আরও কয়েকজন তাবলিগ জামাতে যাওয়ার কথা বলে তারা ঘর ছাড়ে।সিটিটিসির এক কর্মকর্তা জানান,রাজ্জাক,শিব্বিরসহ আরও কয়েকজন উগ্রপন্থি টেলিগ্রামের নিজস্ব চ্যাটগ্রুপ তৈরি করে যোগাযোগ রাখত।এই গ্রুপের চার সদস্য সিটিটিসির হাতে এবং কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের হাতে তিনজন গ্রেফতার হয়েছে।
র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন আরও বলেন,কুমিল্লা এবং সিলেট থেকে একযোগে কয়েকজন নিখোঁজ হওয়া ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে আরও অনেকে নিখোঁজ হচ্ছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।পাশাপাশি যারা তরুণদের মগজ ধোলাই করে বিপথে পরিচালিত করছে তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
এটিইউর পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আসলাম খান বলেন,প্রতিষ্ঠার পর ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত উগ্রবাদী চক্রের দুই শতাধিকের বেশি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়াদের খুঁজে বের করতে সংস্থাটি কাজ করছে।
সুত্র: সময়ের আলো
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | |
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ |
১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |
Development by: webnewsdesign.com