আপডেট

x

মৃত স্বামীর সম্পদ নিয়ে দুই স্ত্রীর মুখোমুখী অবস্থান

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ | 76

মৃত স্বামীর সম্পদ নিয়ে দুই স্ত্রীর মুখোমুখী অবস্থান

রায়হান হোসেন ::

সিলেটে প্রয়াত স্বামীর সম্পত্তি নিয়ে মুখোমুখী অবস্থানে রয়েছেন দুই স্ত্রী।করেছেন সাংবাদিক সম্মেলন।একে অপরের বিরুদ্ধে করেছেন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।সবশেষ বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রথম স্ত্রীর মধ্যে নানা অভিযোগ করেন দ্বিতীয় স্ত্রী। এরআগে দ্বিতীয় স্ত্রীকে কাজের মেয়ে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে নানা অভিযোগ করেন প্রথম স্ত্রী।

জানা যায়,সিলেট নগরের মেন্দিবাগ এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আব্দুস ছত্তার ২০২২ সালের ২৬ মে মারা যান।স্বামী মারা যাবার পর তার রেখে যাওয়া নগরের মেন্দিবাগ পয়েন্টে ছত্তার ম্যানশন নামের মার্কেটটি নিয়ে দুই স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।

বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সিলেট নগরের মেন্দিবাগ এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত আব্দুস ছত্তারের দ্বিতীয় স্ত্রী তাহমিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন,মারা যাওয়ার আগে তার নাবালক সন্তানের নামে অসিয়তনামা রেজিস্ট্রি করে সিলেট নগরের বিশ্বরোডে ছত্তার ম্যানশন নামের মার্কেট হস্তান্তর করে যান তার স্বামী।তারপরও প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও সন্তান তা দখল করতে উঠেপড়ে লেগেছেন।এমনকী স্বামী অসুস্থ ও মৃত্যুর সময় তার পাশেও দাঁড়াননি প্রথম পক্ষের স্ত্রী সাবিহা ও তার সন্তানরা।তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী সাবিহা খাতুন ও তার ছেলে আমজাদ হোসেনের হুমকি-ধমকি ও মিথ্যাচারের কারণে দুই সন্তানসহ বিপন্ন জীবনযাপন করছেন তিনি।গত ১৪ সেপ্টেম্বর সিলেটে আমজাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে তাকে সৎমা হিসেবে অস্বীকার এবং তার বিরুদ্ধে উদ্ভট,কাল্পনিক ও মানহানিকর বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানান তাহমিনা বেগম।

মেন্দিবাগ এলাকায় নিজ মালিকানাধীন ছত্তার ম্যানশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাহমিনা উল্লেখ করেন,তার স্বামীর সঙ্গে প্রথম স্ত্রী সাবিহা খাতুনের কোনো যোগাযোগ ছিল না।সাবিহা সন্তান নিয়ে লন্ডন বসবাস করছেন।২০১০ সালের ৫ মে কোতোয়ালি থানায় স্বামীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সাবিহা।এরআগে ২০০৯ সালে তার ভাই শফিক আলীও জিডি করেন।পারিবারিক অশান্তির কারণে ২০১০ সালের ১৬ জুলাই আব্দুস ছত্তারের সঙ্গে মুসলিম শরিয়াহ আইনে তার (তাহমিনা) বিয়ে হয়।তবে বিয়ের সময় তার বয়স ১৫ বছর হওয়ায় রেজিস্ট্রার কাবিননামা হয়নি।বিবাহিত জীবনে বর্তমানে আফসানা আক্তার মাসিয়া ও আজহার হোসেন নামের সন্তান রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তাহমিনা বেগম আরও বলেন,তার স্বামী আব্দুস ছত্তার দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পর ২০২২ সালের ৬ এপ্রিল তার নামে ছত্তার ম্যানশনটি নাবালক ছেলে আজহার হোসেনের নামে রেজিস্ট্রি অসিয়তনামামূলে হস্তান্তর করেন। নাবালক সন্তানের পক্ষে মার্কেটটির রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে তিনি স্থলাভিষিক্ত হন।অসুস্থ অবস্থায় তার স্বামীকে দেশ-বিদেশে চিকিৎসা করাতে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করা হয়।২০২২ সালের ২৬ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

তাহমিনা বলেন,আব্দুস ছত্তারের বিপদের সময় প্রথম স্ত্রী সাবিহা খাতুন ও সন্তান আমজাদ হোসেনসহ অন্য ছেলেমেয়েরা তার পাশে এসে দাঁড়াননি।কোনো প্রকার সহযোগিতাও করেননি।এখন তারা সম্পত্তি নিয়ে কাড়াকাড়ি ও মারামারি শুরু করেছেন।এক প্রশ্নের জবাবে তাহমিনা বেগম বলেন,আমার স্বামীর বেশ কিছু সম্পদ রয়েছে।তা এখনো ভাগবাটোয়ারা হয়নি।আমি দ্বিতীয় স্ত্রী হলেও তিনি (প্রথম স্ত্রী) ও তার সন্তানরা এর অংশ আইন অনুযায়ী পান।এতে তার আপত্তি নেই।কিন্তু তার সন্তানকে দেওয়া সম্পদ তারা দখল করতে চাচ্ছেন।এমনকী এলাকার জনপ্রতিনিধি,আত্মীয়-স্বজনসহ মুরব্বি কারও কথা তারা শুনছেন না।সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় কাউন্সিলর মোস্তাক আহমদ,আত্মীয় আখতার হোসেন,আব্দুল হান্নান শরীফ,কবির আহমদ দুলাল, কয়েছ আহমদ ও সৈয়দ নুরুজ্জামান তুহিন উপস্থিত ছিলেন।এরআগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর নগরের মেন্দিবাগ এলাকার বাসিন্দা মরহুম আব্দুস ছত্তারের বড় ছেলে মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন অভিযোগ করে বলেন,এক নারীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ও তার পরিবার।এমনকী সম্পত্তি দখল ও পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকিতে রয়েছেন তারা।তিনি বলেন,তার মা ও ভাইবোনকে নিয়ে তারা সপরিবারে ব্রিটেনে বসবাস করেন।এবার মাকে নিয়ে দেশে বেড়াতে এসে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছেন তারা।

আমজাদ বলেন,তার বাবা দেশেই বসবাস করতেন।তাকে দেখাশোনা করা ও রান্নাবান্নার জন্য আমরা গৃহ পরিচারিকা হিসেবে একটি মেয়েকে রেখেছিলাম।এই মেয়েই এখন আমাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগিতায় বাবার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে চায় সে।এমনকী আমাদের প্রাণে মেরে ফেলতে নানা রকম হুমকিও দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন,আমার বাবা আব্দুস ছত্তার গত ২৬ মে মারা যান।তার মৃত্যুর পর বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি তার ঋণ রয়েছে।পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে এই ঋণ পরিশোধ করতে এবং আমার বাবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দেখাশোনা করতে মাকে নিয়ে সম্প্রতি দেশে আসি।দেশে এসেই বুঝতে পারি তার বাবার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে একটি চক্র উঠেপড়ে লেগেছে।বাবার নামে মেন্দিবাগ পয়েন্টের ছত্তার ম্যানশন এবং অন্যান্য বাসার ভাড়া আনতে গেলে জানতে পারি আমাদের বাসার কাজের মেয়ে তাহমিনা নিজেকে বাবার স্ত্রী দাবি করে ভাড়া আদায় করে নিচ্ছেন।এমনকী বাবার নিয়োগ করা ম্যানেজার দুলাল নিজের সুবিধার জন্য তাহমিনাকে সহযোগিতা করছেন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী আমজাদ হোসনের অভিযোগ,দুলাল এবং তাহমিনা নিজেদের দল ভারী করার জন্য চাচা আখতার,জনৈক তুহিন এবং বাবার চাচাতো ভাই শরিফ ও কয়েছকে ম্যানেজ করে ভাড়ার টাকা লুটেপুঠে খাচ্ছেন।স্থানীয় কাউন্সিলর মোস্তাককেও তারা নিজেদের পক্ষে নিয়ে শক্তি বৃদ্ধি করেছেন।

তিনি বলেন,আমরা দুই ভাই,এক বোন এবং আমার মা এখনো জীবিত রয়েছেন।বাবার উত্তরাধিকারী হিসেবে তাহমিনা গং চক্রের গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে এবং অব্যাহত হুমকির কারণে আমরা ভীতসন্ত্রস্ত।

তাহমিনা নিজেকে স্ত্রী দাবি করলেও তার কাছে কোনো কাবিননামা নেই বলে ওই সংবাদ সম্মেলনে জানান আমজাদ হোসেন।তিনি বলেন,১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সে নাকি তার বিয়ে হয়েছে আমার বাবার সঙ্গে।তার দুটি সন্তানও নাকি রয়েছে।এসবের কোনো কিছুই আমাদের জানা নেই।এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা,বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।ওই সংবাদ সম্মেলনে আমজাদ হোসেনের মা যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাবিহা খাতুনও উপস্থিত ছিলেন। তিনিও একই অভিযোগ করেন।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com