পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, ঘোড়াশালে গ্রিড বা বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনো একটি লাইন ট্রিপ করেছে। সেই লাইনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে অন্য লাইন ওভারলোড হয়ে সেটা ট্রিপ করেছে। এর ফলে পূর্বাঞ্চলের গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহস্বল্পতা দেখা দেয়।’
জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু কোনো দেশে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে এ ধরনের বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটলে তাকে বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনাজনিত সমস্যা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মঙ্গলবারের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনাকেও সেভাবেই বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
যেমন লোডশেডিং ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যার কারণেও গ্রিড বিপর্যয় ঘটতে পারে। দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার পরও কেন এখন এই মাত্রায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুললে বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনাজনিত সমস্যার বিষয়টি সামনে চলে আসে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমদানি করা জ্বালানিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের বিদ্যুৎ খাত কার্যত আমদানিনির্ভর জ্বালানির ও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই আমদানিনির্ভরতা বিদ্যুৎ খাতকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় যখন আমদানি কমাতে হয়েছে, তখন উৎপাদনসক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়েছে। জ্বালানির দেশীয় উৎস গ্যাসের অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলনে যথাযথ মনোযোগ না দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্টতই বিদ্যুৎ খাতের পরিকল্পনার বড় ত্রুটি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের মধ্যে ভারসাম্য থাকা জরুরি। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে সরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে যতটা উৎসাহ দেখিয়েছে, সঞ্চালন লাইন সংস্কার ও আধুনিকায়নে ততটাই নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে। এর ফলে মাঝেমধ্যেই বিপর্যয় ঘটছে। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার এক বা একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করে থাকে।
এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। অতীতের এ ধরনের বিপর্যয়ের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর ফলাফল বিবেচনায় নিলে বর্তমান তদন্ত কমিটি নিয়েও আশাবাদী হওয়ার খুব সুযোগ নেই। দায়ী ব্যক্তিরা চিহ্নিত হয় না, সব দায় চাপিয়ে দেওয়া হয় কারিগরি ত্রুটির ওপর। কিন্তু কেন সেই ত্রুটি ঘটল, কাদের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে ঘটল তা জানা যায় না। আমরা যদি ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থাপনা নিরাপদ রাখতে চাই, মঙ্গলবারের বিপর্যয়ের কারণ খুঁজে বের করতেই হবে।
মঙ্গলবারের বিপর্যয় থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে পারি, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় এড়ানো যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বেড়েছে এ নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে না থেকে উৎপাদনের পাশাপাশি সঞ্চালন ও বিতরণেও কাজটিও যাতে যথাযথভাবে করা যায়, সেই পরিকল্পনাও করতে হবে।