বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিতে ৪২ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ!

বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩:৩৫ অপরাহ্ণ | 587

বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিতে ৪২ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ!

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নে বয়স্ক ও বিধবাসহ বিভিন্ন ভাতা কার্ডের তালিকা তৈরিতে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা সমাজসেবা এবং মহিলা বিষয়ক অধিদফতর তদন্ত শুরু করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মাউলি ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালীন, প্রতিবন্ধী, দলিত-হরিজন ও বেদে ভাতা কার্ডধারী রয়েছেন ১ হাজার ৪০৭ জন। কিন্তু ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন, কয়েকজন মেম্বারসহ সংশ্লিষ্টরা মিলেমিশে অর্থের বিনিময়ে নির্ধারিত বয়স না হলেও বয়স্ক ভাতা, স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় স্ত্রীর বিধবা ভাতা, গর্ভবর্তী না হওয়া সত্ত্বেও মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী না হয়েও প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করে দিয়েছেন।

মাউলী ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ মহাজন গ্রামের রঞ্জন বিশ্বাস জানান, তার এবং স্ত্রী যমুনা বিশ্বাসের বয়স্ক ভাতার কার্ড করতে মোট ৪২ হাজার টাকা নিয়েছেন এ ওয়ার্ডেরই সাবেক মেম্বার জাহাঙ্গীর খাঁ।

মহাজন গ্রামের খোকন দাস (৩৭) বলেন, স্থানীয় এক ব্যক্তি তাকে এবং তার আপন ভাইরা মহাজন বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী নৃপেন সাহাকে (৪৬) বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছে। বয়স্ক ভাতার কার্ড পেতে ৬৫ বছর বয়সী হতে হয় তা তিনি জানতেনই না বলে জানান।

দক্ষিণ মহাজন বাজারের গুরুদাসী বিশ্বাস বিধবা না হয়েও বিধবা ভাতার কার্ড করেছেন। গুরুদাসীর ছেলে সজিব বিশ্বাস বলেন, তার মা অশিক্ষিত বিধায় না বুঝেই এ কার্ড করেছেন। ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে এ কার্ড করেছেন বলে জানান।

অথচ একই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নদী ভাঙনে নিঃস্ব ৭৩ বছরের হেমায়েত বিশ্বাস, ৯৮ বছরের নির্মলা বর্মন, বাদাম বিক্রেতা বিধবা শ্যামলি বিশ্বাস (৪০), পঙ্গু নিরঞ্জন বর্মন (৬০) কোনো কার্ড পাননি।

এদিকে ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার সুজল ঠাকুরের স্ত্রী ইতিকা ঠাকুর ২০১৭-১৮ সালে গর্ভবতী না হলেও স্ত্রীর নামে মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড নেন তিনি।

এ বিষয়ে সুজল মেম্বার বলেন, তার স্ত্রী সেসময় গর্ভবর্তী ছিলেন। এ কারণে কার্ড নিয়েছিলাম। এছাড়া তিনি তার বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন।

নড়াগাতি থানা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি উত্তম কুমার সাহা বলেন, এ ইউনিয়নে প্রায় ৪শ কার্ড বিতরণে নয়-ছয় হয়েছে। এ চক্রটি ফেরি করে কার্ড বিক্রি করছে। যে বেশি টাকা দেয় সেই কার্ড পায়। এ ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঠিক তদন্ত করলেই সত্যতা বেরিয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে মাউলি ইউপি চেয়ারম্যান এবং কার্ডের তালিকা প্রস্তুত কমিটির সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই কার্ড করা হয়েছে। ভুল-ত্রুটি বা দু’একটিতে সমস্যা হতে পারে। অনিয়ম-দুর্নীতির কথা যতটা বলছেন ততটা নয়। সুজলের ওয়ার্ডে এসব অভিযোগে বেশি শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তবে কোনো উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা ভিত্তিহীন দাবি করেন তিনি।

জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক রতন হালদার বলেন, মাউলী ইউনিয়নে কার্ড বিতরণে কিছু অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর তদন্ত চলছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে বা যাবে তাদের কার্ড বাতিল করা হবে। এসব কার্ড বিতরণে একটি কমিটি থাকে। প্রত্যেক ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান এর সভাপতি থাকেন। কার্ড বিতরণের অনিয়মে চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা জড়িত হলেও তাদের দায়ী করার ক্ষমতা আমার নেই।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com