আপডেট

x

নগরীতে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টিঃ কবে শেষ হবে নগরবাসীর ভোগান্তি?

বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১১:১৬ অপরাহ্ণ | 76

নগরীতে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টিঃ কবে শেষ হবে নগরবাসীর ভোগান্তি?

সিলেট প্রতিনিধিঃ

সিলেট নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৫২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ সত্বেও দৃশ্যত সেটা কোন কাজে আসেনি।ইতিমধ্যে ড্রেনেজ ব্যবস্থার অধিকাংশ কাজ শেষ হয়েছে।তবু অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।এতে করে ভোগান্তি বাড়ে নগরবাসীর।অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ার কারনে ব্যাহত হয় জনসাধারনের রাস্তায় চলাচল ও যাতায়াত করতে।বৃষ্টির এই জলাবদ্ধ হওয়া পানির কারনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট বন্ধ রাখতে হয়।এবং বাসা-বাড়িতে বৃষ্টির এই পানি ঢুকে আসবাবপত্রের ক্ষতি যেনো এখন নিয়মিত চিত্র হয়ে দাড়িয়েছে।এত কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পরও কি কারণে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়,তা নিয়ে বিস্ময় মিশ্রিত প্রশ্ন নগরবাসীর মনে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন,নদী ও জলাশয় ভরাট,অপরিকল্পিত ড্রেনের উন্নয়নকাজ ও জনগণের অসচেতনতাকে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

নগরবাসীর অভিযোগ,পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার ত্রুটিপূর্ণতা।ড্রেনেজ উন্নয়নে পরিকল্পনার ঘাটতি।কন্ট্রাক্টর থেকে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া।নিয়মিত ড্রেন গুলো পরিষ্কার না হওয়া।দীর্ঘদিন নদী খনন না হওয়া।এই সমস্ত কারনে বৃষ্টির পানি সময়মত নামতে না পেরে জলাবদ্ধতার দেখা দিচ্ছে।

তবে সিটি করপোরেশন বলছে,জলাশয় কমে যাওয়া,অপরিকল্পিত নগরায়ণ,পানি ও পয়োনিষ্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

নগর ঘুরে দেখা গেছে,বৃষ্টি শুরু হলে সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর,জিন্দাবাজার, লামাবাজার,রিকাবীবাজার,পাঠানটুলা,মদিনা মার্কেট,শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস,শিবগঞ্জ,সেনপাড়া,সোনাপাড়া,মেন্দিবাগ,তোপখানা,কাজলশাহ,লালদীঘির পাড়,আম্বরখানাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।এসব এলাকার রাস্তার পাশে ড্রেনে ধীরগতির উন্নয়ন কাজ চলমান।এজন্য বৃষ্টির পানি বের হতে না পারায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।পাশাপাশি যেখানে-সেখানে ফেলা ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনে পড়ে দ্রুত ভরাট হয়ে ড্রেনের পানি ধারণ ক্ষমতার বাহিরে চলে যাওয়ার ফলে অতিরিক্ত পানি বয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।কিছু কিছু জায়গায় আবার ড্রেনের মুখে ময়লা আটকে পানি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় জলবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।

জলাবদ্ধতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে বলেন,গত তিন বছর ধরে দেখছি,একটু বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে যায়।চলাচল করা যায় না।সিটি করপোরেশনের দায়িত্বহীনতার কারণে এটি হচ্ছে।অনেকদিন ধরে দেখছি,ড্রেনের কাজ চলছে,রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে।কিন্তু কাজ কবে শেষ হবে,কবে ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবো তা আমরা কেউ জানিনা।

এক বাসিন্দা বলেন,নগরীর কিছু কিছু স্থানে ড্রেনের কাজ চলছে।কর্তৃপক্ষের দোষ দিয়ে কি লাভ? আমরা যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলি।নিজেরাই চারপাশ পরিষ্কার রাখি না। এমনকি ড্রেনের ঢাকনা তুলে তার মধ্যে হোটেলের উচ্ছিষ্ট,বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলছি।ড্রেন সে সব আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে।কোটি কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে নগরীর উন্নয়নের জন্য।কিন্তু কি কাজ হচ্ছে,তার কোনও সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।দিন দিন ভোগান্তি বাড়ছে আমাদের।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড.জহির বিন আলম বলেন,সিলেট নগরীর আধুনিকায়ন পরিকল্পিত ভাবে হচ্ছে না।জলাশয় ভরাট করে নানা উন্নয়নমুখী অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।সিলেটে গড় বৃষ্টিপাত অনেক বেশি।হঠাৎ এত বৃষ্টির পানি কীভাবে নামবে,কোথায় নামবে? যদি জলাশয় কিংবা লেক ভরাট হয়ে যায়।এর বাইরে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ চলছে।আবার ড্রেনের সঙ্গে নদীর সংযোগও বাধা গ্রস্ত হচ্ছে।যার ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।সে জন্য জলাশয় পুনরুদ্ধার করে ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কারের পাশাপাশি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি প্রয়োজন।পানি যেন দ্রুত সাগর অভিমুখে প্রবাহিত হয় সে জন্য নদী খনন ও নদীর পাড় বাঁধাই করতে হবে।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন,ড্রেনেজ ব্যবস্থা,খাল ও নর্দমা দিয়ে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারাটাই জলাবদ্ধতার মূল কারণ। আরেকটি বড় কারণ হলো,নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া এতে খালের পানি নদীতে নামতে পারছে না।নদী ও খালে পানি প্রবেশের মুখ খুলে দিতে হবে।অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে ড্রেন গুলো সংকুচিত হয়ে গেছে।ড্রেন গুলো নিয়মিত পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে,যেখানে সেখানে ময়লা ফেলার সংস্কৃতি পরিত্যাগ করতে হবে।নগরীর প্রতিটি এলাকায় ও পাড়া মহল্লায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্টি ডাস্টবিন স্থাপন করতে হবে।ডাস্টবিন না থাকার কারনে নগরবাসীকে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলতে হয় এর ফলে যেমন পরিবেশ দূশিত হচ্ছে ঠিক তেমনি ভাবে মারাত্নক ভাবে ক্ষতির সম্মুক্ষিনের মুখে পড়ছে ড্রেন গুলো।এছাড়া পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য নদী খনন করতে হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন,সিলেটে জলাবদ্ধতার অনেক কারণ রয়েছে।এখানে পাহাড় আছে,নদী আছে,টিলা আছে,উঁচু-নিচু জায়গা আছে।আবার এখানে বৃষ্টির পরিমাণও বেশি।আমাদের ড্রেন গুলো রাস্তার পাশ দিয়ে গেছে।ড্রেনের জায়গা বাড়ালে রাস্তা কমে যাবে।বড় ধরনের বন্যার জন্য আমাদের যে ড্রেনেজ ব্যবস্থা দরকার,তা দিতে পারি না।আমাদের গাফিলতি কিংবা অসচেতনতার কারণে ড্রেন পরিষ্কার থাকছে না,ড্রেনে মাটি,ময়লা-আবর্জনা জমে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বৃষ্টি থাকে।এর বাইরেও সিলেটে বছরে ৯ মাস কমবেশি বৃষ্টি থাকে।কোনও কাজ করতে হলে পানি,বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইন শিফট করতে হয়,দেয়াল ভাঙতে হয়।সব মিলিয়ে কাজ অনেক দীর্ঘ হয়ে যায়।আমরা কাজের জন্য জায়গা খুঁড়ি,লোকজন সেখানে ময়লা ফেলে।পাশাপাশি মাটি এসে জমা হয়।আবার পরিষ্কার করতে হয়।এতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে।ময়লার কারণে ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যায়।যা নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

তিনি আরো বলেন,২০০০ সালের আগে সিলেটে ২২ শতাংশ জলাশয় ছিল।নগরায়ণের ফলে তা কমে ৮ শতাংশে নেমেছে।নতুন নতুন ভবন তৈরি হচ্ছে জলাশয় ভরাট করে। এখন পানি কোথায় নামবে? আমরা ড্রেনও সেভাবে বড় করতে পারি না রাস্তা কমে যাবে বলে।সাধারণত ৭.৫ মিলিমিটার ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতকে অতিবৃষ্টি বলে,অথচ সিলেটে কখনও কখনও ঘণ্টায় ৬০-৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।এ পানি নামতে সময় তো লাগবে।আবার জলাশয়ও কমেছে।এখন জলাবদ্ধতা ছাড়া তো কোনও উপায় নেই। নগরায়ণের ফলে ছোট ছোট টিলা কেটে ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে।ফলে সেখানকার মাটি পলি হয়ে ড্রেনে পড়ছে।পলি মাটি বা নদীতে বন্যায় পলি জমে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নালা বা ড্রেন দিয়ে যে পরিমাণ পানি নামার দরকার,তা নামতে পারছে না।এসব এলাকা থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশনে পাম্প বসাতে হবে।স্লুইসগেট বসাতে হবে।তাহলে কিছুটা সমস্যার সমাধান সম্ভব।এছাড়া সমস্যা নিরসনে উন্নত দেশের মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে নগরায়ণের সঙ্গে পানি ও পয়োনিষ্কাশনর ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাই।

সিসিকের এই শীর্ষ প্রকৌশল বলেন,নগরীতে জলাবদ্ধতার যে সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব নয়।এজন্য ধাপে ধাপে কাজ করছে সিসিক।২০১৯ সালে সিসিকের ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ৫২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।ওই টাকায় মহানগরী এলাকায় ৩২৭ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নকাজ চলছে।এরই মধ্যে অধিকাংশ এলাকার কাজ প্রায় শেষ।পুরো কাজ শেষ হতে আরেকটু সময় লাগবে।কাজ শেষ হলে নগরবাসী স্বস্তি পাবে।নগরীর সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পরই নগরবাসী নগর উন্নয়নের সুফল দেখতে পাবেন এবং এর সুফল ভোগ করতে পারবেন।ভালো কিছু পেতে হলে তো সবাইকে একটু কষ্ট করতেই হবে।আমরা কেউ ই চাইনা নগরবাসী কষ্ট বা ভোগান্তিতে পড়ুন আমরা আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল প্রকার কাজ সম্পন্ন করে নগরবাসীকে সুন্দর ও সস্থিরতার নগরী উপহার দেয়ার।

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক

Development by: webnewsdesign.com