পৃথিবীর কোনো শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় ধূমপানকে মানব-স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হিসেবে ধরা হয় না। বরং; ধূমপান মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে। প্রমাণ হয়েছে ধূমপানের কারণে ধূমপায়ী বা ধূমপায়িনী মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে, কেউ একটু তাড়াতাড়ি আবার কেউ প্রবীণ বয়সে। শুধু তা-ই নয়, যারা ধূমপান করে তাদের দ্বারাই ক্ষতির মুখে পড়ে পরিবার ও আশেপাশের মানুষ। ধূমপানের ভয়ংকর ক্ষতিকর প্রভাবের কথা বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ধূমপান বিষয়ে কড়াকড়ি আইন করেছেন। প্রাথমিকভাবে আমরা প্রায় সকলেই জেনে গেছি প্রকাশ্যে জনসমাগম স্থলে বাজারে, রেলস্টেশনে, বাসস্ট্যান্ডে, সিনেমা হলে, শপিংমলে, আদালত প্রাঙ্গণে, খেলার মাঠে, জনসভা স্থলে, পাবলিক বাসে এককথায় ‘পাবলিক প্লেসে’ ধূমপান করা নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী জরিমানাসহ দণ্ডনীয় অপরাধের অপরাধী। কিন্তু; আমাদের শহর এলাকায় যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময় তৎপর দেখা যায় বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে সেখানেই চোখে পড়ে ধূমপান চলে! আমাদেরকে আরও সচেতন হতে হবে।
সচেতনতা দরকার পরিবারের পিতা মাতার। অনেক বছর আগের ঘটনা : আমার ফার্মেসি ব্যবসা ছিলো। পাশের দোকানে ছিলো চা-সিগারেটের দোকান এবং ওই দোকানে কলা বিক্রি হতো। এক ভদ্রলোক এলেন সাথে তার ছোট্ট ছেলে। ছেলেটি আবদার করলো কলা খাবে। কিন্তু তার পিতা বললো, ‘নারে বাবা কলায় ফরমালিন দেয়া, তাছাড়া আমার কাছে টাকা নাই, তুমি বাসায় চলে যাও।’ ছেলেটি মন খারাপ করে চলে গেল। এর পরপরই ওই ছেলের পিতা পকেট থেকে নতুন একশত টাকার নোট বের করে গোল্ড লিফ সিগারেট কিনলেন এবং সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে গেলেন। কতোটা নির্মমতা এখানে ফুটে উঠেছে।
আমি ধূমপান করি না। তাই জানি না সিগারেটের দাম কতো এবং আমাদের দেশে দোকানগুলোতে কি কি নামের সিগারেট পাওয়া যায়। কৌতুহল বশত খোঁজ নিয়ে জেনেছি যারা ধূমপানে আসক্ত তারা দিনেরাতে কম করে ১০টি সিগারেট টানে। কেউ আরও বেশি বা কম। কৌতুহল বশত খোঁজ নিয়ে জেনেছি প্রতি শলাকা বেনসন সিগারেট ১৮ টাকা। গোল্ডলিফ ১৩ টাকা। মার্লবোরো প্রতি শলাকা ১৭ টাকা। রয়েল, ডার্বি, হলিউড প্রতি শলাকা দাম ৫ টাকা। দামের সঠিক মূল্য জানি না, তাই ভুল হতে পারে। তবে টাকা ছাড়া নিশ্চয়ই কোনো দোকানদার কাউকে এমনি এমনি সিগারেট দেয় না।
আমাদের জানা আছে অনেকে মারাত্মক ধূমপায়ী। যারা ধূমপায়ী, তারা চিন্তা করে দেখুন, যদি সিগারেটের একটি শলাকা গড়মূল্য ১০টাকা হয়, তাহলে দিনে ১০টি শলাকা হিসেবে ১০০টাকা এবং সেই হিসেবে মাসে ৩০০০টাকা খরচ হচ্ছে। এতে করে নিজের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে এবং একইসাথে স্ত্রী সন্তানেরও ক্ষতি হচ্ছে। পিতা ধূমপান করে স্ত্রী সন্তানের কাছে গেলে, সন্তানকে আদর করলে ধূমপায়ির নিশ্বাসের সাথে বের হওয়া ক্ষতিকর গন্ধযুক্ত বাতাস ঘরে ছড়ায় এবং স্ত্রী সন্তানের নাক দিয়ে তাদের ফুসফুসে তা প্রবেশ করে। কোনো উপকার হচ্ছে না। বরং; ভয়ংকর ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি আপনার ধূমপান করার কারণে বাতাসে ছড়ানো ধোঁয়ায় বহু অধূমপায়ী পিতামাতা ও তাদের সন্তানেরও ক্ষতি হচ্ছে। আপনি-ই এর জন্য দায়ী।
আমাদের অসচেতন পিতামাতার অনেকে ধূমপান করে অনেক টাকা অপচয় করে। অথচ খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে আমাদের সমাজের এরকম ধূমপায়ী অনেকে নিজের সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় দুধ, ডিম, ফল ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত যোগান দিতে পারছে না। একটু সচেতন হলে ধূমপানের পিছনে ব্যয় না-করে ওই পরিমাণ টাকা দিয়ে সন্তানের জন্য পুষ্টিকর খাবার জোগাড় করা যায় নিশ্চিন্তে।
যারা সচেতন হতে পারে তাদের জন্য আলোচ্য বিষয়ের দীর্ঘ লেখা না-লেখলেও চলে। আমরা সচেতন হলে, আসুন বলি, আমি ধূমপান করি না। আসল কথা হচ্ছে ভালোবাসা। আমরা বলি, স্ত্রী সন্তানকে ভালবাসি! আমি বলি, আগে নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। নিজেকে যদি ভালো না-ই বাসেন, অন্তত স্ত্রী সন্তানের প্রতি যদি সত্যি সত্যিই ভালোবাসা থাকে, তাহলে ধূমপান ত্যাগ করুন — এখনই। পরিবার ও সমাজের মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচার পরিবেশ নষ্ট করা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। আসুন ধূমপান বর্জন করি — আমাদের সন্তান আমাদের পরিবার আমাদের সমাজের মানুষকে ভালোবাসি। আমাদের বোধশক্তি জাগ্রত হোক।
লেখক : কলামিস্ট মোহাম্মদ আব্দুল হক
Development by: webnewsdesign.com