গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের শিরিরচালা গ্রামে থাকা গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস কর্তৃক মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে অদৃশ্য কারণবশত পাঁচজনকে জড়িয়ে একটি চাঁদাবাজি মামলায় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার (২২ মে ২০২০) তারিখে মামলায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টসের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লার পক্ষে কারখানার হিসাব ব্যবস্থাপক মৃত গোলাম সরোয়ারের সন্তান শহিদুল ইসলাম (৪৫) বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা নম্বর দায়ের করেন।
ওই মামলায় যাদেরকে জড়ানো হয়েছে তারা হলেন, উপজেলার বানিয়ারচালা গ্রামের মৃত সূর্যত আলীর সন্তান রফিকুল (৫৫) ও মফিজ উদ্দিন (৫০), নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ উপজেলার ডাক্তারখালী গ্রামের মৃত আব্দুল বাছেদের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও তার স্ত্রী সাহিদা আক্তার (৩৫) এবং বানিয়ারচালা গ্রামের রফিকুল ইসলামের সন্তান সাইফুল ইসলাম (৩০)।
মামলার বিবরণে মূলকথা: মামলার আসামিরা গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টস লিমিটেডের লোকজনের মাধ্যমে অর্থাৎ বাদী শহিদুলের মাধ্যমে মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে, চাঁদার টাকা না দেওয়ায় গোল্ডেন রিফিটের ক্রয়কৃত জমিতে থাকা ২০-২৫ টি মেহগনিসহ অন্যান্য ফলের ৮-১০ টি গাছ কেটে ফেলে। এতে আনুমানিক ৭৫ হাজার টাকা পরিমাণ ক্ষতি করে আসামিরা। দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে মামলার বাদীর মাধ্যমে কারখানা মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লাকে খুন-জখমসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি দেয় আসামিরা। পর্যবেক্ষণে জানা যায়, মামলার বিবরণে গাছপালা কর্তন ও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা চাওয়ার যে বিষয়টি লেখা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এ বিষয়টি প্রতিবেদক মামলার বাদীর সাথে কথা বলে স্পষ্ট করেন। মামলার বাদী কারখানার হিসাব ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলামের কাছে মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি আসলে ওই কারখানায় চাকরি করি, আমাকে শুধু বলছে যে স্বাক্ষর করার জন্য, তাই আমি স্বাক্ষর করে দিছি, এই মামলার ব্যাপারে বিস্তারিত আমি কিছুই জানিনা”। কারখানা কর্তৃপক্ষ আপনার থেকে জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছে ? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘জোর করে না আমাকে বলছে এখানে একটা সাইন করতে হবে, তাই আমি করে দিয়েছি, আমি ডিটেইলস কিছু জানি না”। বিস্তারিত না জেনেই আপনি স্বাক্ষর করেছেন ? “এরপর তিনি আরও বলেন, ওইভাবে আসলে বিস্তারিত কিছু জানি না, কোথায়? কে? কি করেছে? কি সমাচার? তা আমি কিছুই জানি না”। মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে যাদেরকে মামলায় জড়ানো হয়েছে তাদের একজন রফিকুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ ভবানীপুর মৌজার এসএ ৩১ ও আরএস ৬৭৮ দাগে মোট জমির পরিমাণ ১০২ শতাংশ। এই দাগে তাদের নামে ৩৫ শতাংশ জমি তারা দাবি করে। কিন্তু পৈতৃক সূত্রে গত এক’শ বছর আমাদের ভোগদখলে থাকা একই মৌজার এসএ ৬৭৫ ও আরএস ২৬০১ দাগে জমির পরিমাণ তিন একর ৬৪ শতাংশ। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের ভোগদখলে থাকা এই জমি জোরপূর্বক দখলে নেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে কিছুদিন যাবৎ। তাদের দাবিমতেও আমাদের জমিতে আসার সুযোগ নেই, কারণ তাদের রেকর্ডকৃত জমি সম্পূর্ণ অন্য দাগে। ওই জমিও ভুলবশত তাদের নামে রেকর্ড হয়েছিল। পরে “বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত, গাজীপুর” এ একটি রেকর্ড সংশোধনী মামলা নম্বর ১১২/২০১৮ দায়ের করি। যা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। আমরা আদালতের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে আমাদের জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমাদের নামে চাঁদাবাজি মামলা করেছে, যার কোনও সত্যতা নেই। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে যারা মিথ্যা মামলা দায়ের করে আমাদেরকে হয়রানি করছে তাদের শাস্তি দাবি করছি। মামলার বিররণে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, স্থানীয় আব্দুর রাজ্জাকের সন্তান সোহেল রানা (২৫), স্থানীয় শামসুল হক ও জয়নাল আবেদীনের (ডা. জয়নাল) কাছ থেকে ইতিপূর্বে চাঁদা নিয়েছে আসামিরা। অনুসন্ধানে এসব প্রসঙ্গে আরও তথ্য বেরিয়ে আসে। মামলা সূত্রে জয়নাল আবেদীনের কাছে চাঁদা নেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না। আমার কাছে কেউ কখনো চাঁদা দাবি করেনি এবং আমি কাউকে চাঁদা দেইনি। মামলায় চাঁদা দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না”। মামলার দুই নম্বর আসামির সন্তান নাজমুল জানিয়েছেন, “যেহেতু মামলার বাদী মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনেই কারখানা কর্তৃপক্ষের কথামতো স্বাক্ষর করেছেন, যেহেতু ঘটনাস্থলে অর্থাৎ যে জমিতে গাছ কাটার কথা বলা হয়েছে সেখানে বাস্তবে গাছ কাটার কোনও আলামত নেই, যেহেতু মামলার বাদীর সাথে ভুক্তভোগী অর্থাৎ মিথ্যা ও সাজানো ঘটনায় বাস্তবে চাঁদা চাওয়ার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি, সেহেতু মামলাটি ভিত্তিহীন। মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে এই মামলাটি যারা পরিকল্পিতভাবে করেছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমি তাদের বিচার দাবি করছি”।
জয়দেবপুর থানার এসআই (উপ পরিদর্শক) সাদেকুর রহমানকে বাদীর কাছ থেকে মামলার কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া প্রসঙ্গে অবগত করলে তিনি বলেন, “তাহলে বাদী প্রত্যাহার করুক মামলা, বাদীকে বলেন, মামলা প্রত্যাহার করতে। আমি এখনও ওই জায়গায় যাইনি। ঈদের আগের মামলা রেকর্ড হইছে, এখনো যাইনি। আসামি রফিকুল যে খারাপ লোক, এটা এলাকার সবাই জানে”।
২৪টুডেনিউজ/উ/ইসলাম/গাজীপুর
Development by: webnewsdesign.com