করোনাভাইরাসের কারণে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর দফায় দফায় ছুটি বেড়েছে। তবে এই ছুটিতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের মধ্যে রাখতে সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করছে সরকার।
তবে হাওর-বেষ্টিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার প্রায় লাখ-খানেক শিক্ষার্থী অনলাইনে চলমান এই পাঠ্যক্রমের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে পারছে না। টেলিভিশন সংকট, দুর্বল নেটওয়ার্ক আর নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী-ই আগ্রহ পাচ্ছে না চলমান এ শিক্ষা কার্যক্রমে। আবার প্রচার-প্রচারণার অভাবে হাওরাঞ্চলের অনেক শিক্ষার্থী চলমান এই কার্যক্রমে বিষয়ে জানেনই না।
অন্যদিকে বর্ষা মৌসুম চলে এসেছে। হাওরাঞ্চলেও পানি বাড়তে শুরু করেছে। আর কিছুদিন পরই হাওরগুলো পানিতে থৈ থৈ করবে। হয়তো ডুবে যাবে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর। এতে কোন মতে পানি-বন্দি মানুষ বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে। ভুলে যাবে শিশুদের শিক্ষাবর্ষ। ভুলে যাবে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর কথাও। কারণ বর্ষা মৌসুমে এমনিতেই হাওর এলাকায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকে।
কারণ, হাওর এলাকায় একটি স্কুল থেকে আরেকটি স্কুলের দূরত্ব বেশি। আবার এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামেরও রয়েছে বিশাল দূরত্ব। এসব দূরত্ব গোছাতে একমাত্র ভরসা নৌকা বা বাঁশের সাঁকো। আর হাওরাঞ্চলের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষের-ই নেই নিজস্ব নৌকা কেনার ক্ষমতা। সব মিলিয়ে বর্ষা এলে হাওরাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা ঝিমিয়ে পড়ে।কিন্তু চলতি বছর করোনার কারণে এমনিতেই কয়েকমাস বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আবার কবে খুলবে সে নিশ্চয়তাও নেই। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও হাওরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিভাবে নিশ্চিত করা হবে সেটিরও কোন পরিকল্পনা নেই। অথচ উপজেলায় উপজেলা সব মিলিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৫৭টি। এরমধ্যে প্রাথমিক ১৩৪টি, মাধ্যমিক ১৯ টি, স্কুল এ্যান্ড কলেজ ২টি, সরকারি ও বেসরকারি কলেজ রয়েছে একটি করে।
তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, করোনাভাইরাসের পর শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিতে প্রয়োজনীয় নৌকার ব্যবস্থা করা হবে। আর চলমান অনলাইন পাঠদানে অংশগ্রহণের জন্য সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বলা হয়েছে, তারা যেন শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
আর হাওর এলাকার সচেতন মানুষ বলছেন, এবার হাওরে এলাকায় কিভাবে এ সংকট মোকাবেলা করা হবে এটি এখনই নির্ধারণ করতে হবে। একই সাথে হাওর এলাকার জন্য আবাসিক স্কুল নির্মাণের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। আর চলমান বছরের জন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য নৌকাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে হাওর ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাশমির রেজা বলেন, ‘বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পাঠদান বন্ধ ও তাছাড়া সামনে বর্ষাকাল এ সময়েও হাওরের স্কুলগুলোতে নিয়মিত পাঠদানে ছেদ পড়ে, শিশুদের পড়ালেখার এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে একাডেমিক সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে আর হাওর এলাকার জন্য আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাও জরুরি বলে মনে করছি।’
শিক্ষক গোলাম সরোয়ার লিটন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান বন্ধ হওয়ায় অনলাইন, ফেসবুক গ্রুপ ও টেলিভিশন মাধ্যমে পাঠদানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষকরাও অনেকটা আন্তরিক হয়ে এসব কার্যক্রমে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করছে। কিন্তু হাওর-পাড়ের স্কুলগুলোতে এসব মাধ্যমে পরিচালিত পাঠদান নানান প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে ফলপ্রসূ নাও হতে পারে।
তবে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী বলেন, বর্ষায় হাওরের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য কাঠের নৌকার ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে পাঠদানে যে ব্যহত হচ্ছে সে দিকটা কাটিয়ে উঠতে টেলিভিশনের মাধ্যমে পাঠদানে কার্যক্রমে ছাত্রছাত্রীদেরকে সম্পৃক্ত করতে শিক্ষক অভিভাবকরা যেন ছাত্রছাত্রীদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন সে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান জানান, হাওর এলাকার জন্য আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এগুলো বিবেচনাধীন রয়েছে। তাছাড়া বর্ষায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য কাঠের নৌকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
Development by: webnewsdesign.com