উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম শামসুল উলামা আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (র.)-এর ১২তম ওফাত বার্ষিকী আগামীকাল (১৫ জানুয়ারি) বুধবার। এ উপলক্ষ্যে জকিগঞ্জের ফুলতলী ছাহেববাড়ি সংলগ্ন বালাই হাওরে বিশাল ঈসালে সওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল ১০টায় আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর মাযার জিয়ারতের মাধ্যমে শুরু হবে মাহফিলের কার্যক্রম। এরপর খতমে কুরআন ও দোয়ার মাধ্যমে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে খতমে বুখারী, খতমে খাজেগান, দালাইলুল খায়রাত শরীফের খতম, যিকর মাহফিল, বিষয়ভিত্তিক বয়ান ও স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা।
মাহফিলে তা’লীম-তরবিয়ত প্রদান করবেন আল্লামা ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.)-এর ছেলে আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী। মাহফিল উপলক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মাহফিলে দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত পীর-মাশায়িখ, আলিম-উলামা, ইসলামী শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হবেন।
মাহফিলের সম্মানিত অতিথি রাসূলে পাক (সা.)-এর ৩৩তম ও বড়পীর আবদুল কাদির জিলানী (র.)-এর ১৯তম অধঃস্তন বংশধর শায়খ সায়্যিদ আফিফুদ্দীন আল জিলানী আল বাগদাদী মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ফুলতলী এসে পৌঁছেছেন। এছাড়া মাহফিলে উপস্থিত থাকবেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ।
হযরত আল্লামা ফুলতলী (র.) উপমহাদেশে সুপরিচিত এক মহান ব্যক্তিত্ব। ১৯১৩ সালে জকিগঞ্জ উপজেলার নিভৃত পল্লী ফুলতলীতে তাঁর জন্ম। প্রায় শতবর্ষব্যাপী জীবন অতিবাহিত করে ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তিনি ইন্তেকাল করেন। এ দীর্ঘ জীবনে ইলমে কিরাতের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনন্য ও বিশ্ববিখ্যাত। ইলমে হাদীসের খিদমতে তাঁর রয়েছে পৌনে এক শতাব্দীর প্রোজ্জ্বল ইতিহাস। সমাজের অসহায়-দুঃস্থ মানুষের সেবায় তাঁর রয়েছে বহুবিধ খিদমত। তিনি সারাটি জীবন মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করেছেন বিভিন্নভাবে। তিনি একজন সুলেখক ও সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। ইলমে কিরাত ও ইলমে হাদীসের খিদমতের পাশাপাশি তাযকিয়ায়ে নফস বা ইলমে তাসাওউফের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। অগণিত মানুষ তাঁর হাতে বায়আত হয়ে আল্লাহপ্রাপ্তির পথে এগিয়ে গেছেন। তিনি ওয়ায, যিকিরের তা’লীম, খানকা মাহফিল ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার সারাজীবন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে তিনি দেশ-বিদেশে অনেক মসজিদ-মাদরাসাও প্রতিষ্ঠা করেছেন।
এদিক প্রতি বছরের মতো এবারও ১৫ জানুয়ারি তাঁর ঈসালে সাওয়াব মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। লাখো মুসলিম জনতাকে বরণ করতে প্রস্তুত হয়েছে বালাই হাওর। মূল স্টেজ, প্যান্ডেল ও প্যান্ডেলের বাইরে বসার জন্য সব মিলিয়ে প্রায় ৪ লক্ষ বর্গফুট জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে খাবার পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ বর্গফুটের খাবারস্থান। জকিগঞ্জ-আটগ্রাম রোডে রতনগঞ্জ বাজারের উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকে গাড়ী পার্কিং-এর জন্য বৃহৎ পরিসরে দশটি মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। রতনগঞ্জ বাজার থেকে ছাহেববাড়ি অভিমুখী রাস্তার মুখে মোটর সাইকেল রাখারও সুব্যবস্থা করা হয়েছে। সার্বিক শৃঙ্খলার জন্য প্রস্তুত হয়েছে প্রায় হাজারো স্বেচ্ছাসেবক। ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব বণ্টনও সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
মাহফিলকে সফল ও স্বার্থক করে তুলতে ঈসালে সাওয়াব মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে সর্বস্তরের মুসলিম জনতার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
Development by: webnewsdesign.com